গণপরিবহনে যৌন হয়রানি রোধে বাসচালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণ
গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি রোধে বাসচালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আজ রবিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিটিসিএ ভবনে এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার। ডিটিসিএ ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) যৌথ উদ্যোগ ও সুইডেন দূতাবাসের সহায়তায় ৫ দিন ধরে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ডিটিসিএ’র প্রধান নির্বাহী নীলিমা আখতার একটি গবেষণাকে উদ্ধৃত করে বলেন, ব্র্যাকের নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতকালে ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিক ও অন্যান্যভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয় ৪১-৬০ বছর বয়সী পুরুষ দ্বারা। দেশে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত যাত্রী বহন, যানবাহনে অপর্যাপ্ত আলো, তদারকির অভাবে (সিসি ক্যামেরা না থাকা) নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে।
তিনি জানান, ডিটিসিএ এ কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে কারণ সরকার নারীবান্ধব গণপরিবহন নিশ্চিত করতে চায়। নারীদের যথাযথ উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। গণপরিবহন ব্যবহারকারীদের আচরণগত পরিবর্তন আনা অত্যন্ত প্রয়োজন।
ডিটিসিএ প্রধান নীলিমা আখতার আরও বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নিশ্চিতকরণে ডিটিসিএ কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে, প্রতিবন্ধীবান্ধব গণপরিবহন চালুকরণের লক্ষ্যে কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে ও হাঁটা ও সাইকেল-বান্ধব নগরী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ডিটিসিএ নিয়মিতভাবে ‘বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত’ দিবস পালন করে আসছে। তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি জনবান্ধব ও যাত্রীদের জন্য নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
অনুষ্ঠানের শুরুতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) পরিচালক বনশ্রী মিত্র নিয়োগী বলেন, যৌন হয়রানি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। যার ফলে সমাজ অনিরাপদ ও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। দেশকে শান্তিপূর্ণ করার জন্য নারীদের সম্মান রক্ষা করা প্রয়োজন।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সোমা দত্ত বলেন, ৯৯৯ ছাড়াও ১০৯৮ এবং ১০৯ এই নাম্বারে ফোন দিয়ে যে কেউ গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার থেকে প্রতিকার পেতে পারে। এ বিষয়টি অনেকেই জানেন না। জনসচেতনতার জন্য বিষয়টির প্রচার প্রয়োজন। কোনো বাসচালক যদি বাসে হয়রানিমূলক পরিবেশ সামাল দিতে না পারেন তাহলে যেন তারা এসব নাম্বারে ফোন দেন।
ডিটিসিএ’র বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, ‘বাসের মতো গণপরিবহনকে নারীদের জন্য নিরাপদ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে আমরা আজ এই কর্মশালা শুরু করছি। এই বাসচালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু হলো। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাসচালক ও সহকারীদেরকে এই প্রশিক্ষণ থেকে পাওয়া জ্ঞান অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। যার মাধ্যমে পরিবহন খাত এবং সমাজে একটি বড় পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করেন। এছাড়া এই প্রশিক্ষণের পর বাসচালক ও সহকারীদের সনদ প্রদান করার কথাও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডিটিসিএ’র ট্রেনিং এডভাইজর মোহাম্মদ হামিদ মিয়া। প্রশিক্ষণ প্রদান করেন শুভাশীষ চন্দ্র মোহন্ত এবং ডিটিসিএ’র ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট অফিসার মো. সেলিম খান।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) ‘নিরাপদ যাতায়াত, নারীবান্ধব নগর’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছে, যার লক্ষ্য গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করা। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় হয়রানির সমস্যা মোকাবিলা এবং সকল যাত্রীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। এই কার্যক্রম
‘কমিউনিটি-ভিত্তিক জলবায়ু সহনশীলতা ও নারীর ক্ষমতায়ন’ প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে, যা বাংলাদেশে সুইডেন দূতাবাসের অর্থায়নে এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (DTCA)-এর সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।