যৌক্তিক সময় মানে অযৌক্তিক সময় কাটানো নয়: শফিকুর রহমান
যৌক্তিক সময় মানে অযৌক্তিক সময় কাটানো নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইফতারপূর্ব অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস,গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এই ইফতারে অংশ নেন।
ইফতার পূর্ব বক্তব্যে জামায়াতের আমির বলেন, 'গত সাড়ে ১৫ বছরে সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে; তার কতিপয় জিনিস অবশ্যই পরিষ্কার হওয়া উচিত। এই জন্য সকলে আমরা একমত, এখানো কারো কোনো দ্বিমত নেই। আমরা সবাই বলছি সংস্কারের প্রয়োজন। কতটুকু প্রয়োজন সেটা নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু সংস্কার যে প্রয়োজন এব্যাপারে কোনো মত পার্থক্য নেই। আমরা বর্তমান সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। যৌক্তিক সময় মানে অযৌক্তিক সময় কাটানো নয়। আবার যৌক্তিক সময় মানে চাপ দিয়ে তাড়াহুড়াও নয়। যৌক্তিক সময় হচ্ছে এই কাজের জন্য, মৌলিক সংস্কারগুলোর জন্য যে সময়টুকু প্রয়োজন আসরা সরকারকে সেটুকু সময় দেওয়ার পক্ষে।'
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
জাতীয় স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান জানান জামায়াতের আমির ডা.শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, '২৪’র গণবিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা আমাদের হাতে ধরা দিয়েছে। সবার কাছে আহ্বান জাতীয় স্বার্থের আমরা যেন এক হই। আমাদের মতের ভিন্নতা থাকবে। মতপার্থক্য থাকা এটা কোনো অপরাধ নয়। বরঞ্চ এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সৌন্দর্য। আমাদের মতপার্থক্য যেন মতবিরোধে রূপান্তরিত না হয়। দেশকে গড়া আমাদের স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা।'
শেখ হাসিনা শাসন আমলের জামায়াতের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, সেই চিত্র তুলে ধরে শফিকুর রহমান বলেন, 'আমাদের শত শত কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য যুবককে থানায় ধরে নিয়ে, পায়ে বন্ধুক ঠেকিয়ে গুলি করে পা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। হাত কেটে ফেলা হয়েছে, ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, গুম করা হয়েছে, চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, ব্যবসা বাণিজ্য তছনছ করে দেওয়া হয়েছে।'
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি আরও বলেন, 'ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান ছিলো, রাজনৈতিক দল, ওলামা-কেরাম , প্রতিবাদী কণ্ঠ, সাংবাদিকসহ কাউকেই তারা (আওয়ামী লীগ) ছাড় দেয়নি। সবার ওপর তারা জুলুম করেছে। লাখ লাখ মামলা দিয়ে কোটি মানুষকে বারবার জেলের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। আওয়ামী জাহেলিয়ার যুগ আর বাংলাদেশে ফিরে না আসুক।'
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পরিচালনায় ইফতারে অংশ নেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক,হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুনির হোসাইন কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ, কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা মুনতাসিম বিল্লাহ মাদানি, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরহাদুজ্জামান ফরহাদ,জাগপার রাশেদ প্রধান, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গণি, লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ। শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই রমজান আলী ও আলী হোসেন এবং জামায়াত-শিবিরের শহীদ ও মাজলুম নেতাদের পরিবারের সদস্যগণ এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের বেশ কয়েকটি শহীদ পরিবারের সদস্যগণ ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেছেন।
এছাড়া, যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক জনাব আবুল আসাদ ও বর্তমান সম্পাদক শাহীদুল হক আজম, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউনেশনের সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন ও নির্বাহী সম্পাদক মাসুদুর রহমান খলিলী, কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম প্রমুখ ইফতার মাহফিলে অংশ নেন। ইফতার মাহফিলে জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল ও এডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব প্রমুখ।