গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক লুটপাট হয়েছে: ড. ফাহমিদা

অনলাইন ডেস্ক
১৫ মার্চ ২০২৫, ১৬:৩৮
শেয়ার :
গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক লুটপাট হয়েছে: ড. ফাহমিদা

গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক অপচয়, দুনীর্তি ও লুটপাট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। আজ শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে ছায়া সংসদ ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ীরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত নয়। গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে শুল্ক সুবিধা না থাকায় বাংলাদেশের রপ্তানিখাতে বছরে ৮ বিলিয়ন ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রেও উন্নয়ন সহযোগিতা হ্রাস পাবে। ’

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় যে অর্থনৈতিক তথ্য দেওয়া হয়েছিল তা ছিল গোজামিল নির্ভর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অর্থনৈতিক ডাটা কীভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় বাংলাদেশ ছিল তার মধ্যে একটা অগ্রগণ্য দেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) নির্দেশদানের মাধ্যমে তারা মনমতো ডাটা ব্যবহার করত। ’

তিনি বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরে বাংলাদেশকে কমার্শিয়াল রেটে ঋণ নিতে হবে। যা পরিশোধ করা ও ঋণের শর্তপূরণ করা কঠিন। ’

চীনের ঋণের ব্যাপারে ফাহমিদ খাতুন বলেন, ‘চীনের ঋণের ব্যাপারে সবসময় একটা সংশয় থাকে। অন্যান্য দেশের ঋণের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স স্পষ্ট থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে তা থাকে না। কোনোভাবেই আমাদের ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক অপচয়, দুনীর্তি ও লুটপাট হয়েছে। ঋণ পরিশোধে বাস্তবভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে সতর্কতা ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ’

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী সরকারের আমলের ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হতে যাচ্ছি কি না? বিগত সরকারের আমলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হতো। ভুল, মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে উন্নয়নের মিথ্যা গল্প শোনানো হতো। দেশের রিজার্ভ, জিডিপি, রপ্তানি আয়, দারিদ্র বিমোচন, খাদ্য উৎপাদন, বাল্যবিবাহ এমনকি প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়েও মিথ্যাচার করা হয়েছিল বিগত সময়ে। সরকার যেভাবে চাইত বিবিএস সেভাবেই তথ্য পরিসংখ্যান প্রদান করতো। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যকে বোগাস বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘বিদেশে রোড শোর নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচায় করে প্রমোদ ভ্রমণ করা হয়েছে। দেশের খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য কখনো জানতে দেওয়া হয়নি। যে পরিমাণে ঋণ আদায় হতো তার চেয়ে বেশি অবলোপন হতো। ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন পাঁচ তারকা হোটেলে বসে সুদহার ও ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে দিত। সরকার, কতিপয় রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী এই চার চক্রের নেক্সাস দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল আওয়ামী সরকার। ‘

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘যদিও অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন গত এক দশকের বেশি সময় সরকার যে ডাটা ম্যানিপুলেট করেছে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য তা মোকাবিলা করা সম্ভব। তবে বিগত সরকারের আমলে আর্থিক খাতের অনিময়-দুনীর্তি, জ্বালানি সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদহার বৃদ্ধি, এফডিআই কমে যাওয়া, বেসরকারি বিনিয়োগের ঘাটতিসহ বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৬- এ বাংলাদেশের জন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জে ফেলার শঙ্কা রয়েছে। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় আছে তাই এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। এতে দেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করবে। নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনের সুযোগ বাড়বে, অধিক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়বে।’  

‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার সঠিক পথে আছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের পরাজিত করে এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।