ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হচ্ছে তো?
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই অত্যন্ত আশাবাদী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারকালে যত কম সময়ে এই যুদ্ধ বন্ধ করবেন বলে শক্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা অতটা বাস্তবিক চিন্তা ছিল না। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই যেসব বিষয় নিয়ে তিনি অগ্রাধিকারভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন, এর মধ্যে এই যুদ্ধাবসানের প্রচেষ্টা সবচেয়ে জোরালো। তিনি গতকাল বলেছেন, তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের ‘ভালো ও ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে রিয়াদ জানিয়েছে, যুদ্ধাবসানের উদ্যোগে সব ধরনের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। কিন্তু মস্কোর দাবি, এই যুদ্ধ বন্ধের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ইউরোপ। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও আল জাজিরার। নিজস্ব মালিকাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে রুশ বাহিনী। এসব সেনার জীবন যেন বাঁচে, সে জন্য তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে অনুরোধ করেছেন। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা নিজেদের কুরস্ক অঞ্চলের ২৮টি জায়গার পুনর্দখল নিতে পেরেছে। মস্কো ও কিয়েভ উভয়ই দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও দুই পক্ষ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য সৌদি আরব সব ধরনের উদ্যোগকে সমর্থন করে। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এর আগে জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনায় ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করা হয়েছিল। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান পুতিনের সঙ্গে টেলিফোন আলোচনায় ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে সংলাপে সহায়তা এবং সব ধরনের উদ্যোগে সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বৃহস্পতিবার পুতিন বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে তার গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। এই পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছিল গত মঙ্গলবার সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর জেদ্দায় আলোচনার পর।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সঙ্গে সামরিক গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় পুনরায় শুরু করতে সম্মত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধের পর এ তথ্য বিনিময় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। জেদ্দায় আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, এখন বল রাশিয়ার কোর্টে। মস্কোর ওপর নির্ভর করছে তারা এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সাড়া দেয় কিনা। ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুতিন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে বলেছেন, তিনি ইউক্রেন সংকট সমাধানের গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং রাশিয়া-আমেরিকা সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে সর্বাত্মক অবদান রাখতে প্রস্তুত।
এদিকে ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে ইউক্রেনে শান্তি প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনেছে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, ইউরোপীয় দেশগুলোর লক্ষ্য হলো- উত্তেজনা বৃদ্ধি করা এবং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করা। এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, জার্মানি ও ফ্রান্স পূর্ব ইউক্রেনের ওপর ২০১৪-২০১৫ সালের মিনস্ক চুক্তি লঙ্ঘনের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে। অন্যদিকে ব্রিটেন ২০২২ সালের মার্চ মাসে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করা থেকে নিরুৎসাহিত করেছে। এই দেশগুলো ইউক্রেনীয় সংকট সমাধানের জন্য কোনো প্রচেষ্টা করেনি, যা ইউক্রেন সম্পর্কে তাদের অবস্থানকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে রাশিয়া।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস