বিদেশের সঙ্গে লেনদেন আবার ঘাটতিতে
বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য আবার ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এই হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার। অথচ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় সাড়ে ৫ কোটি ডলার। এক মাসের ব্যবধানে এই ঘাটতি বেড়েছে। এ সময়ে আর্থিক হিসাবের উদ্বৃত্তও কমে এসেছে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক লেনদেনের সার্বিক ভারসাম্যেও ঘাটতি বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রায় সরকারের আয়-ব্যয়ের চিত্র প্রতিফলিত হয়
চলতি হিসাবে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে খরচ বেশি হলে এতে
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
ঘাটতি দেখা দেয়। মূলত রোজার কারণে জানুয়ারিতে অনেক বেশি আমদানি হয়েছে। ওই মাসে দেশে ডলার আসার চেয়ে বেশি বের হয়েছে। ফলে চলতি হিসাব ঘাটতিতে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৬৬১ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল আরও বেশি, ১ হাজার ১৬৩ কোটি ডলার। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগস্টে ইতিবাচক ধারায় ফেরে চলতি হিসাব। আবার সেপ্টেম্বরে নেতিবাচক হয়। ডিসেম্বরে ফের ইতিবাচক ধারায় ফিরলেও জানুয়ারিতে আবার ঘাটতি তৈরি হয়। সব মিলিয়ে সাত মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি হয়েছে ৫৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। অথচ একই সময়ে প্রবাসী আয়ে ২৩.৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৮১১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩.৩০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে রেকর্ড পরিমাণ এলসি খোলা হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৬১৩ কোটি ডলার। অন্যদিকে এই সাত মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৬৩৬ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ফলে আলোচ্য সময়ে বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৯৭৬ কোটি ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ২৯১ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এ সময় আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত কমে এসেছে। জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে উদ্বৃত্ত কমে হয়েছে ৮৫ কোটি ডলার। অথচ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে এই হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ১১৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪৫৪ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৬৮৯ কোটি ডলার। যদিও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর আর্থিক হিসাব ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়েছিল। সাধারণত এই হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুদ ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ডলার-সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় দেড় দশকের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো এ হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয়।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, এ সময়ে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতিও কিছুটা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এই সূচকে ঘাটতি হয়েছে ১১৭ কোটি ডলার। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪১ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি ছিল ৪৬৮ কোটি ডলার।