নারীর প্রতি বৈষম্য বিদ্বেষ ও সহিংসতা কমছেই না
আজ শনিবার আর্ন্তজাতিক নারী দিবস। ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন : নারী ও কন্যার উন্নয়ন’- এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এই আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে ছিলেন নারী। তখন সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়েছিল নারীসমাজ। রক্তও ঝরিয়েছে। যে কারণে এ বছর ভিন্ন প্রেক্ষাপটের পর আসা দিবসটি সামনে রেখে সমাজে নারীর নিরাপত্তা ও সব কাজে সমান অধিকারের ক্ষেত্রে কতটা পরিবর্তন এনে দিয়েছে- এ বিষয়টি জোরালোভাবে আলোচনা হচ্ছে।
নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের অধিকার কর্মী আমাদের সময়কে বলেছেন, দেশে নারীদের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। অর্থনীতিতে তারা বড় অবদান রাখছে। এ ছাড়া রাজনীতি, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন, শিক্ষা,
স্বাস্থ্য খাতসহ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে নারীর প্রতি বৈষম্য, বিদ্বেষ ও সহিংসতা কমেনি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে বলেই মনে করেন নারী অধিকার কর্মীরা।
বাংলাদেশে নারীর এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ শনিবার পালিত হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশে^ এ দিবস পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
কর্মসূচি : দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নারী দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ‘অদম্য নারী’ ও ‘বেগম রোকেয়া পদক’ প্রদান করা হবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতুলনীয় অবদান রাখা নারীদের। বিশেষ করে নারী ক্রিকেটারদের বিশেষ সম্মান জানানো হবে আজকের অনুষ্ঠানে।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো আলোচনা সভা, মানববন্ধন ও র্যালির আয়োজন করেছে। এর মধ্যে আজ বেলা ১১টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় নারী সেলের উদ্যোগে সকাল ১০টায় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তি ভবনের সামনে সমাবেশ ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
জানতে চাইলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, অন্যান্য বারের মতোই এ বছর নারী দিবস পালিত হবে যথাযোগ্য মর্যাদায়। তিনি বলেন, তবে এ বছর আমরা নারী ক্রিকেটারদের বিশেষভাবে সম্মানিত করব।
নারীর অংশগ্রহণ কেন প্রয়োজন : বিশ্বব্যাংকের মতে, যেসব দেশে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার বেশি হয়, সেসব দেশের অর্থনীতির আরও শক্তিশালী হওয়ার প্রবণতায় থাকে। এর কারণ হলো যখন নারীদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করা হয়, তখন তারা অর্থনীতিতে অবদান সম্পূর্ণভাবে রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
নির্যাতন, সহিংসতা, নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা বাধা থাকা সত্ত্বেও গত ৫ দশকে বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। এই অগ্রগতি বিদেশেও প্রশংসিত হচ্ছে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিগুণ।
নারী দিবস কমিটির ১১ দাবি : গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন এবং সমানাধিকারের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা ৫০টি সংগঠন আয়োজিত অনুষ্ঠানে নারী অধিকারকর্মীরা ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন।
প্রসঙ্গত, ১৯১৪ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে নারী দিবস পালন শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হলো নারী ও পুরুষের সমঅধিকার আদায়।