ভাগনিকে নির্যাতনের অভিযোগে মামা-মামি কারাগারে

চাঁদপুর প্রতিনিধি
০৭ মার্চ ২০২৫, ২২:১০
শেয়ার :
ভাগনিকে নির্যাতনের অভিযোগে মামা-মামি কারাগারে

চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের আলী আহম্মদ ভুঁইয়ার মেয়ে রুজিনা (২০)। গরিব বাবার দুই মেয়ে ও তিন ছেলের মধ্যে তিনি তৃতীয়। রুজিনার মামা রুবেল মোল্লা তার দুই সন্তানকে দেখভালের জন্য নিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান। কিছুদিন যেতেই রুজিনার মামি তাকে নির্যাতন শুরু করেন। নির্যাতন সইতে না পেরে পালিয়ে যান রুজিনা। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং অভিযুক্ত রুজিনার মামা-মামিকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশকে রুজিনা জানান, আপন মামাত বোন শিশু রাজিয়া ও মামাত ভাই প্রতিবন্ধী রিফাতকে দেখাশুনা করে ভালোই কাটছিল রুজিনার দিন। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই ভয়ংকর হয়ে ওঠে রুজিনার মামি রোকেয়া বেগমের আচরণ। প্রায়ই তিনি নির্যাতন শুরু করেন। মামির নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় প্রতিদিনই পালানোর সুযোগ খুঁজতেন রুজিনা। কিন্তু সুযোগ হয়ে ওঠে না।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মামা-মামি দুজনে বাসা থেকে বের হন। আর এই সুযোগেই চাঁদপুর শহরের মাদ্রাসা রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন রুজিনা। কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার পাশে বসে কাঁদতে থাকেন তিনি। বিষয়টি পথচারীরা জানতে পেরে পুলিশকে খবর দেন।

পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করায় ও অভিযুক্ত মামা-মামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।

এদিকে অমানবিক ও পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার রুজিনাকে দেখতে আজ শুক্রবার বিকেলে হাসপাতালে আসেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুর রকিব। তিনি তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।

এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা রুজিনার পাশে আছি। তার সুচিকিৎসার জন্য আমরা ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করছি। তবে যারা এ ধরনের অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানাব।’      

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের মোল্লা বাড়ির আবুল মোল্লার ছেলে রুবেল মোল্লা। রুজিনা তার আপন ভাগ্নি। রুজিনা ছিল তার বড় বোনের বাসায়। কিন্তু মামা রুবেল তার শিশু সন্তানকে দেখাশুনা করার জন্য গত ৬ মাস পূর্বে শহরের মাদ্রাসা রোডে তার বাসায় রুজিনাকে নিয়ে আসেন। রুবেল মোল্লা ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাইতো মামি ও মামাতো দুই ভাই-বোনসহ রুজিনা এ বাসাতেই থাকত। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় রুজিনার ওপর নির্যাতন। কারণে-অকারণে তাকে শারিরীক নির্যাতন করতো মামি রোকেয়া বেগম। একটু ভুল হলেই তাকে পুতা, কাঠ ও দা দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করতো। তার সারা শরীরেই ছিল ক্ষতের চিহ্ন। আর এভাবেই চলছিল তার দিন। যদিও মাঝে মাঝে মামা এসে সামান্য কিছু ওষুধ কিনে দিত। কিন্তু তাতেও জখম ভাল হয়নি। বরং দিনদিন তিনি আরও অসুস্থ হতে থাকেন। তাইতো উপায়ন্তর না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পূর্বে তিনি বাসা থেকে পালিয়ে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন জানান, রুজিনাকে রাস্তার পাশে বসে কান্না করতে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তার ওপর নির্যাতনের কথা জানান। পরে তার অবস্থা দেখে আমরা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করি। খবর পেয়ে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কাউসার ওই বাসা থেকে রুবেল মোল্লা ও তার স্ত্রী রোকেয়াকে আটক করেন।

ঘটনাটি জানতে পেরে ও মেয়ের শারীরিক অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন রুজিনার বাবা আলী আহম্মদ ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, আমার মেয়ে এমন নির্যাতনের শিকার আমি জানতাম না। আমি যখনই আমার মেয়েকে বাড়িতে পাঠাতে বলতাম কিন্তু পরে নিয়ে আসবে বলে আমাকে জানাত। আমি ভাবতাম মেয়ে তার মামার বাসায় আছে, অবশ্যই আমার বাসা থেকে ভাল আছে। তাই আমি কখনো জোর করতাম না। তবে এখন যা দেখলাম তা দেখে আমি সইতে পারছি না। আমি ওই নিষ্ঠুর মহিলার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, খবর পেয়ে গৃহকর্মী মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে এই ঘটনায় ওই নারীর বাবা বাদী হয়ে অভিযুক্তদের আসামি করে মামলা করেছে।