বর-কনে দুজনেই পড়ে একই স্কুলে, বাল্যবিয়ের দায় নিচ্ছে না কেউ
একই বিদ্যালয়ের নবম ও ষষ্ঠ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর বিয়ের ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। তিন মাস ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ৫ লাখ টাকা দেনমোহড়ে তাদের বিয়ে হয়। তবে এ বাল্যবিয়ের দায় নিতে চাচ্ছে না কেউ।
একই স্কুলে বর (১৫) নবম শ্রেণিতে ও কনে (১৩) ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তারা দুজনেই উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই ছাত্রী প্রেমিকের বাড়িতে চলে আসে। খবর পেয়ে ছাত্রীর মা নিতে এলে সে মায়ের সঙ্গে যায়নি। একপর্যায়ে রাত ১২টার দিকে স্থানীয় মসজিদের ইমাম দুই স্কুল শিক্ষার্থীর বিয়ে পড়ান। এ বাল্যবিয়ের বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তবে সরেজমিনে গিয়ে ওই দুই শিক্ষার্থীকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। কিশোরের পরিবার তাদের অন্যত্র সড়িয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বরের মা জানান, ছেলের সঙ্গে প্রেম করে মেয়ে বাড়িতে চলে আসে। মেয়ের মা-চাচি নিতে আসলে তাদের সঙ্গে যায়নি। পরে রাতে পরিবারের সদস্যরা তাদের বিয়ে দেন। এখন কোর্টের মাধ্যমে তাদের কাবিন করানো হবে। বিয়ের সময় মেয়ের পরিবারের কেউ ছিলেন না।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মো. নুরুল ইসলাম বলেন, হাত জোড় করে বলেছি বাল্যবিয়ে পড়াতে পারব না। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারের অনুমতি ও হুকুমে বাধ্য হয়েছি বিয়ে পড়াতে।
বর কনের বয়স হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বয়সের বিষয়ে কিছু জানা নেই। মেয়ের অভিবাবক উপস্থিত ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদেরকেউ দেখিনি। তবে স্থানীয় ইসমাইল, উজ্জল, আইয়ুব আলীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
মেয়ের মা বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশে থাকেন। খবর পেয়ে মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে ছিলাম। সে আসেনি। পরে শুনেছি তাদের বিয়ে পড়ানো হয়েছে। বিয়েতে আমরা কেউ ছিলাম না।’
এ বিষয়ে কথা বলতে তাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আল আমিনকে মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মমিন বলেন, বিয়ের জন্য ছেলের বাড়িতে মেয়ে চলে এসেছে। ছেলের পরিবারকে বলেছি, মেয়েকে তার বাড়িতে ফেরত পাঠাতে। একইভাবে মেয়ের পরিবারকে বলেছি মেয়েকে নিয়ে যেতে। আমার কথা অমান্য করে রাতে তাদের বিয়ে পড়ানো হয়। এখন আমাকে জড়িয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। আমি বিয়ে পড়াতে বলিনি।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম জানান, গলদা পাড়া গ্রামে বাল্যবিয়ের খবর পেয়েছি। ইউএনও স্যার দুপক্ষকে ডেকেছেন। এ বিষয়ে স্যার ব্যবস্থা নিবেন।