বিনিয়োগকারী নিজেই তদন্ত কমিটির সদস্য!

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৫ মার্চ ২০২৫, ২৩:০৮
শেয়ার :
বিনিয়োগকারী নিজেই তদন্ত কমিটির সদস্য!

দেশের পুঁজিবাজারে বিগত সময়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও কারসাজির ঘটনা খতিয়ে দেখতে গত ২ সেপ্টম্বর পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তিকে এই তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম ‘এইমস বাংলাদেশ’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাঈদ। যাকে নিয়ে পূর্বেই অনেক বিতর্ক রয়েছে। এ অবস্থায় অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করার বিষয়টি কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বিএসইসির কমিশন। 

জানা গেছে, ইয়াওয়ার সাঈদ এইমস বাংলাদেশ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় রিলায়েন্স ১ ও গ্রামীণ স্কীম ২ থেকে মোট ৫.৬৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। বর্তমানে এই বিনিয়োগে ক্ষতির পরিমান অর্ধেকেরও বেশি। ৯৮ টাকায় কেনা এই বন্ডের বতমান মূল্য ৪৩ টাকা। ৫ আগস্টের পর পুঁজিবাজারের অনিয়মের তদন্তে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তার অন্যতম এজেন্ডা সুকুক বন্ড। কিন্তু এই কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে ইয়াওয়ার সাঈদের এইমস সুকুক বন্ডের বিনিয়োগকারী, এমতাবস্থায় সঠিক তদন্ত হওয়া নিয়ে বেড়েছে জটিলতা। উল্লেখ্য, ২/৩টি কোম্পানীর তদন্ত রিপোট জমা পড়লেও ৩০০০ কোটি টাকার বেক্সিমকো সুকুক বন্ডের তদন্ত রিপোট এখনো জমা হয়নি।

মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের মত খেলাপি প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখে এইমস বাংলাদেশ’র গ্রামীন স্কীম ২ ফান্ডটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের লোকসান হয়েছে ৬২৮ কোটি টাকা। এ বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকা একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে আমানতকারীর অর্থ যথাসময়ে ফেরত দিতে পারছে না ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। এই আমানতের বিপরীতে এইমস এর মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো নিয়মিত মুনাফা পেয়েছে কিনা তা তদন্তের প্রয়োজন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এইমস এর ব্যবস্থাপনাধীন ফান্ডের ৩০ জুন, ২০২১ এর আথিক প্রতিবেদনের উপরে স্বাধীন নীরিক্ষক হিসেবে আটিসান ইউনিয়ন ক্যাপিটালে বিনিয়োগের বিষয়ে মতামত প্রদান করা সত্ত্বেও এ বিষয়ে গত ৪ বছরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ইয়াওয়ার সাঈদ থাকাবস্থায় এ বিনিয়োগের উদ্দেশ্য এবং অস্তিত্ব নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে, যার সঠিক তদন্তের প্রয়োজন। তৎকালীন সরকারের সময়ে প্রভাব খাটিয়ে এ জাতীয় তদন্ত কিভাবে বন্ধ ছিলো তা খতিয়ে দেখা দরকার।

ইয়াওয়ার সাঈদের ব্যবস্থাপনাধীন গ্রামীণ ওয়ান স্কিম টু ফান্ড থেকে স্বৈরাচারী সরকারের দোসর বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান শিবলি রুবাইয়াত সিন্ডিকেটের সদস্য কারসাজির খায়রুল আলম হিরুর ফরচুন সুজের শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে ক্রয়মূল্যের তুলনায় বাজারমূল্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগের মূল্য ৬১৩ শতাংশ ও ১ হাজার ৪৬৩ শতাংশ বেড়েছে। ফান্ডটির ৩০ জুন ২০২১ ও ৩০ জুন ২০২২ সময়ের পোর্টফোলিও প্রতিবেদনে এ তথ্য দেখা গেছে। ফরচুন সুজের বিষয়টি বিএসইসির তদন্ত কমিটির তদন্তের আওতায় রয়েছে। এক্ষেত্রে সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে অতীতে এ দুটি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বিষয়টি বর্তমানে তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে ইয়াওয়ার সাঈদের ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে স্বার্থগত দ্বন্দ্ব তৈরি করবে কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে।

এইমস-এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম, ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন বাজার বিশেষজ্ঞ ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন।