পদোন্নতি চান অবসরপ্রাপ্ত ৫১২ অতিরিক্ত সচিব

তাওহীদুল ইসলাম
০৪ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
পদোন্নতি চান অবসরপ্রাপ্ত ৫১২ অতিরিক্ত সচিব

সচিব পদে পদোন্নতি চেয়ে গতকাল সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবরা। ‘বঞ্চিত’ অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবদের দাবি, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তারা বঞ্চনার শিকার এবং ওই সময়ে অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত সচিবদের পদোন্নতি দিতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে বঞ্চিত এমন ৫১২ জন সচিব হতে চান। অতিরিক্ত সচিব পদে (গ্রেড-২) মূল বেতন ৬৬ হাজার টাকা থেকে ৭৬ হাজার ৪৯০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সচিব পদে নির্ধারিত মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটিতে ১ হাজার ৫৪০ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবেদন দিয়েছিলেন। এর মধ্যে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে সচিবও রয়েছেন। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ৭৬৪ জনকে বঞ্চিত হিসাবে পদোন্নতি দেয় সরকার। অবশিষ্ট ৭৭৬ জন বঞ্চনার শিকার বলে দাবি করছেন। পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৭৬৪ জনের মধ্যে ৫১ জনকে অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নািত দেওয়া হয়। এদের ৩৮ জন কখনো পদোন্নতিবঞ্চিত নন বলে গতকাল দাবি করেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবরা। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মোট ১ হাজার ৫৪০টি আবেদনের মধ্যে

অবশিষ্ট ৭৭৬ জনের আবেদন স্বাধীনভাবে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করা হয়। এক্ষেত্রে সরকারি চাকরিবিধিমালা বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেছেন তারা। বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ফোরামের আহ্বায়ক ড. মো. নাসির উদ্দিন ও সদস্য সচিব আব্দুল মান্নান ইলিয়াস স্বাক্ষরিত চিঠি গতকাল জমা দেওয়া হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।

এ বিষয়ে ৮৬ ব্যাচের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব আসম ইমদাদুদ দস্তগীর আমাদের সময়কে বলেন, প্রকৃত বঞ্চিতদের পদোন্নতি দেওয়া জরুরি। অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন।

জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরে অবসরে যাওয়া ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পদোন্নতি পাওয়ারা পদ অনুযায়ী মর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা পাবেন। ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির ক্ষেত্রে অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবরা। তারা বলেছেন, ২০০৯ সালে ১৯৮২ ব্যাচে ১৪২ জন কর্মরত ছিলেন। বিগত সরকারের আমলে ৪৪ জন সচিব/সিনিয়র সচিব হন। সম্প্রতি হয়েছেন ৪০ জন। মোট ৮৪। তাহলে এখনও ৫৮ জন বঞ্চিত। একইভাবে ১৯৮২ ব্যাচ (বিশেষ), ৫ম ব্যাচ, ৭ম ব্যাচ, ৮ম ব্যাচ, ৯ম ব্যাচ ও ১০ম ব্যাচের অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়েছে।

একাধিক কর্মকর্তা জানান, জনপ্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ (অতিরিক্ত সচিব) থেকে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের বঞ্চিত দেখানো সঠিক কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, সবাই তো আর সচিব হবেন না। পাশাপাশি একটি ব্যাচের অনেক বেশি কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন- ১১৯ জনের মধ্যে ৫১ জন অতিরিক্ত সচিবকে সচিব করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৫ জনই একই ব্যাচের। এর মধ্যে অনেকেই কোনো প্রকার বঞ্চনার স্বীকার হননি।

অন্তর্বর্তী সরকার গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর ‘বঞ্চনা নিরসন কমিটি’ গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে। কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়। কমিটি সাড়ে চার হাজারের মতো আবেদন বিশ্লেষণ করে ১ হাজার ৫৪০ জনকে ‘বঞ্চিত’ হিসেবে পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করে। সেখান থেকে ৭৬৪ জনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এ নিয়েই আপত্তি ‘বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ফোরামের’।