যেসব কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে

অধ্যাপক ডা. এমএস জহিরুল হক চৌধুরী
০৪ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
যেসব কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে

নানা কারণেই মাথায় ব্যথা হয়। এর দুটি ধরন- প্রাইমারি আর সেকেন্ডারি। প্রাইমারি হেডেক হলোÑ মাইগ্রেন, টেনশন টাইপ হেডেক, ক্লাস্টার হেডেক ইত্যাদি। আর সেকেন্ডারি হেডেক হলো- সাইনোসাইটিস, মাস্টয়ডাইটিস, গ্লুকোমা, স্ট্রোক, মাথার আঘাতজনিত, মস্তিষ্কের টিউমার ইত্যাদি।

চিকিৎসা ও প্রতিকার : মাথাব্যথার ধরন বা কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়। এজন্য প্রয়োজন রোগ নির্ণয় করা। মাইগ্রেন থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে। ঘুম হতে হবে পরিমিত। অতিরিক্ত বা কম আলোয় কাজ না করা, কড়া রোদ বা তীব্র ঠাণ্ডা পরিহার করা, উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা, বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে বেশি সময় থাকা যাবে না। মাইগ্রেন শুরু হলে পানি পান করতে হবে (বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম নিতে হবে। ঠাণ্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখলেও আরাম পাওয়া যায়।

মাইগ্রেন প্রতিরোধী খাবার : ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, যেমন- ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক। বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে। সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম রয়েছে। আদার টুকরো বা রস দিনে দুবার জিঞ্জার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।

যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন : চা, কফি ও কোমলপানীয়। চকোলেট, আইসক্রিম, দই, ডেইরি প্রোডাক্ট (দুধ, মাখন)। টমেটো ও সাইট্রাস জাতীয় ফল। গমজাতীয় খাবার, যেমনÑ রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি। আপেল, কলা ও চিনাবাদাম।

নিরাময়ে ঘরোয়া উপায় : পানিশূন্যতার কারণে অনেক সময় মাথাব্যথা হতে পারে। তাই মাথাব্যথা অনুভূত হলে বেশি পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি তাজা ফলের রস ও পানিসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার যারা খেয়ে থাকেন, তাদের অযথা মাথাব্যথা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। নিয়মমাফিক কাজ চালানোর জন্য মস্তিষ্কের গ্লুকোজ প্রয়োজন হয় আর সময়মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি মস্তিষ্কে সরবরাহ না হলে মাথাব্যথা হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের সমস্যায় এবং পর্যাপ্ত সময় ঘুম না হওয়ায় মাথাব্যথা হতে পারে। কাজের ফাঁকে চোখ বন্ধ করে কিছু সময় বিশ্রাম করুন। ঘরের আলো কমিয়ে চেয়ার বা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বা শুয়ে কিছু সময় বিশ্রাম নিলে মাথাব্যথা কমে যায়। কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে আরাম পাওয়া যায়। মাথায়, ঘাড়ে ও কাঁধে কুসুম গরম পানি ঢাললে মাথা ও ঘাড়ের পেশিগুলো শীতল হয় ও মাথাব্যথা কমে আসে। হালকা মাথাব্যথা উপশমে হাসি বেশ উপকারী। হাসলে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টিকারী এন্ড্রোফিন হরমোন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এটি মাথাব্যথা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। বুক ভরে শ্বাস নিলে তা ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। বিশুদ্ধ বাতাসে প্রাণ ভরে শ্বাস নিন। প্রাকৃতিকভাবে মাথাব্যথা কমিয়ে আসবে। মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে হলে খোলা কোনো জায়গা থেকে হেঁটে আসতে পারেন অথবা মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করবেÑ এমন কিছু করতে পারেন।

লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল

চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা

০১৯২৭০৭৮৭৬৬, ০১৭৯৮৫৬০০৪৪