তবুও সম্পর্ক রক্ষায় মরিয়া কিয়েভ
ট্রাম্প-জেলেনস্কি নজিরবিহীন বাগ্বিতণ্ডা
কথা ছিল, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠকে ইউক্রেনের খনিজ নিয়ে চুক্তি হবে। এর বিনিময়ে নিরাপত্তার গ্যারান্টি আদায় করবে কিয়েভ। কিন্তু কোথায় কী! গোটা বৈঠক নজিরবিহীন উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে ভণ্ডুল হয়েছে। টেলিভিশনে ‘লাইভে’ সারা বিশে^র মানুষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ‘ঝগড়ার’ সাক্ষী হয়েছেন। এ সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ট্রাম্পের সুৃরে সুর মেলান। খবর বিবিসি, আল জাজিরা।
ট্রাম্প-জেলেনস্কির আলোচনা এতটাই তিক্ত হয়ে ওঠে যে, শেষ পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজ ছাড়াই জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস
ছাড়তে হয়। ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাদানুবাদের একপর্যায়ে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের ওভাল অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়।
খবরে বলা হয়, আলোচনা শুরুতে সবারই আন্তরিকতা ছিল। প্রায় আধা ঘণ্টা আলোচনা চলতে থাকে। কিন্তু জেডি ভ্যান্সের কথার সূত্র ধরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ভ্যান্স বলেন, ‘কূটনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হওয়াটাই হয়তো শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার পথ। আর সেটাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করছেন।’ জবাবে জেলেনস্কি ২০১৯ সালে ব্যর্থ যুদ্ধবিরতি চুক্তিসহ তিন বছর আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার পুরোদমে যুদ্ধ শুরুর কথা বলেন। পুতিন সম্পর্কে জেলেনস্কি বলেন, কেউ তাকে থামায়নি। পাল্টা প্রশ্নে জেলেনস্কি বলেন, আপনি কী ধরনের কূটনীতির কথা বলছেন? ভ্যান্স বলেন, যা জেলেনস্কির দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবে। এর পর দুপক্ষের মধ্যকার উত্তেজনা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। ভ্যান্স অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি অসম্মানজনক আচরণ করছেন এবং মার্কিন গণমাধ্যমের সামনে পরিস্থিতিকে ঘোলা করছেন।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
এদিকে ট্রাম্পও জেলেনস্কিকে দোষারূপ করতে থাকেন। এমনকি জেলেনস্কিকে তৃতীয় বিশ^যুদ্ধ বাঁধাতে কার্ড খেলছেন বলেও অভিযোগ করেন ট্রাম্প। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের মধ্যে, ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, আমাদের স্টুপিড প্রেসিডেন্টের (জো বাইডেন) মাধ্যমে আমরা ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার দিয়েছি। এ সময় তিনজনই একে অপরের কথার পিঠে কথা বলেন।
তবুও সম্পর্ক রাখতে মরিয়া কিয়েভ : হোয়াইট হাউসে অপদস্থ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখতে চাইছেন জেলেনস্কি। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠককে তিনি ‘কঠিন’ বলে বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুযায়ী খনিজসম্পদ নিয়ে চুক্তি করতে ইউক্রেন প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু এর বিনিময়ে ওয়াশিংটনকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে হবে। ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যর্থ বৈঠকের পর জেলেনস্কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। যদিও ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ সবাই জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন। এমনকি ইউক্রেনের জনগণও জেলেনস্কিকে সমর্থন জানিয়েছেন।
কী বলছে রাশিয়া : ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকে বিতণ্ডা নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন কী মন্তব্য করেন তা নিয়ে সংবদামাধ্যমে আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। তবে বিবিসির খবরে বলা হয়, এ বিষয়ে পুতিন সতর্ক রয়েছেন। এমন বৈঠক নিয়ে দ্রুত কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চান না তিনি। তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্র সফর পুরোটাই কূটনৈতিক ব্যর্থতা।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
ন্যাটোর জন্য বড় সংকট : কিয়েভ-ওয়াশিংটনের মধ্যে প্রকাশ্য ভাঙন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর জন্য বড় সংকটের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ নিয়ে গতকাল বিবিসি পৃথক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ছাড়াও ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি অনেক সংশয় ও প্রশ্ন দেখা দেবে। ট্রাম্প কি তার এক সময়ের পূর্বসূরি হ্যারি ট্রুম্যানের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন? ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ঘোষণা দেন, ন্যাটো জোটের কোনো দেশের ওপর হামলা যুক্তরাষ্ট্র নিজের ওপর হামলা বলেই মনে করবে। যদিও শুক্রবারের বৈঠকের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নগণ্য হয়ে উঠেছে।
ট্রাম্পকেই দুষলেন ১৪ মার্কিন গভর্নর : জেলেনস্কির সঙ্গে দ্বন্দ্বে ট্রাম্পকেই দোষারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ ডেমোক্র্যাট গভর্নর। গতকাল আল জাজিরার খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর যৌথ বিবৃতি দিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পক্ষে দাঁড়ান। উত্তেজনার জন্য তারা ট্রাম্পকেই দোষারোপ করেন। যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, রাশিয়ার আক্রমণের পর জেলেনস্কি তার জাতির জন্য এবং তার জনগণের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছেন। তার কাজকে ক্ষুণ্ন করার পরিবর্তে বিশ্বমঞ্চে মার্কিনিদের শক্তিশালী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করতে হবে।