গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেন জেদনী

অনলাইন ডেস্ক
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৯
শেয়ার :
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেন জেদনী

আত্মপ্রকাশের একদিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সংগঠক শ্যামলী সুলতানা জেদনী। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৬ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে এ তথ্য জানান তিনি।

ফেসবুক পোস্টে জেদনী বলেন, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির ‘সংগঠক’ পদ থেকে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে পদত্যাগ করলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৭ / ৮ মাস ছিল আমার জীবনের অন্যতম অভিজ্ঞতার সময়কাল। পুরো সময়জুড়ে অনেক কিছু বুঝেছি, জেনেছি, শিখেছি। নানা রকম চিন্তাভাবনার মানুষের সঙ্গে মিশতে পারা এবং তাদের সঙ্গে গল্প করতে পারা নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অন্যতম অধ্যায়। জুলাই/অগাস্টের পর আর সবার মতো আমার মনেও নানা আশা-আকাঙ্ক্ষার উদয় হয়েছে যার পুরোটা জুড়ে ছিল দেশের মানুষের জন্য কিছু করা এবং গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন। কাজেই গণঅভ্যূত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে এর ভীতকে মজবুত করার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছি। যখন মনে হয়েছে, হাতে সময় কম তবে কাজ অনেক; ঠিক তখনই সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে এই জায়গাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। চলমান সেমিস্টারেও বেশিরভাগ ক্লাস করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে বিশেষ কারণে সবকিছু থেকে আজ ইস্তফা দিতে হচ্ছে।’

গত ৬ মাসে বোধহয় ১২০ দিনও বাসায় থাকতে পারিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মায়ের হাতের রান্না খেতে পারিনি। কারণ দেশের নানা প্রান্তের মানুষকে পড়ার জন্য, বোঝার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছি। আমাদের সমাজে মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন এখনও আসেনি। কাজেই যখন রাত ২/৩টায় বাসায় ফিরতাম, গলির মোড়ের দোকানদার থেকে শুরু করে অনেকে আড়চোখে তাকাতো। এইসব উপেক্ষা করে চলার দারুণ ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা অবশ্য আমাকে দিয়েছে। পড়াশোনা/নিজের শখ/যত্ন বিসর্জন দেওয়া বা কারো কোনো ভাবনা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই কিংবা কোনো অনুশোচনা কাজ করছে না। তবে আজ খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, গত ৬ মাস আমার মাকে আমি ঠিকঠাক সময় দিতে পারি নি বরং বেশিরভাগ সময় উপেক্ষা করে গেছি।’

জেদনী বলেন, ‘আমার এইটুকু জার্নিতে আমার মা সবচেয়ে বেশি সাপোর্টিভ ছিল, কি কি করেছে আমার জন্য সেগুলো বলা এখানে মুখ্য বিষয়ও নয় অবশ্য। সবকিছু বাদ দিয়ে এই জায়গাকে আপন করে নেওয়ার ফলে যা কিছু হারিয়েছি, তা নিয়ে মা মাঝেমধ্যে বকা দিলেও আজ যখন আমি এখান থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি; ঠিক তখনই আমার মায়ের চোখেও পানি দেখেছি!’

ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জন্য শুভকামনা রইল। ৫৪ বছরের কুৎসিত ছাত্র রাজনীতির অবসান এই প্লাটফর্মের হাত ধরে হোক, এই প্রত্যাশা! আপনারা সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা করুন, স্বজনপ্রীতির অবসান ঘটিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার দিকে অগ্রসর হোন। যোগ্য নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেয়া এবং মানুষকে মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠুন, মানুষের অধিকারের কথা বলুন।’

তিনি বলেন, ‘যাদের সঙ্গে এতদিন কাজ করেছি কিংবা গল্প করেছি, তাদের জন্যও শুভকামনা রইল। আপনারা এগিয়ে যান, সাংগঠনিকভাবে আপনাদের সঙ্গে না থাকলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিবাদে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব, অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার লড়াই আজীবন চলবে। আজকের সিদ্ধান্ত আমার জীবনের অন্যতম কঠিন এবং কষ্টের সিদ্ধান্ত। তবে আবুল মনসুর আহমেদ এর একটা লাইনকে আমি ধারণ করি বলি এখানে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠছে না।’

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশীদ পদত্যাগ করেন। ইতোমধ্যে তিনি পদত্যাগপত্রও জমা দিয়েছেন।