অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা, এলাকাবাসীকে লক্ষ্য করে অর্ধশত গুলি
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে নদীর পাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলন করার সময় বাধা দেওয়ায় এলাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে দুই দফায় প্রায় অর্ধশত গুলি ছোড়েছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় নৌকা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আহত হয়েছেন একজন। একটি ড্রেজার আটক করেছে এলাকাবাসী।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌণে ১২টার দিকে উপজেলার ষোনআনী বিদ্যুৎকেন্দ্র সংলগ্ন মেঘনা নদীর পাড়ে এই ঘটনা ঘটে। আহত পলাশ (৩৫) গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনী গ্রামের বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শী আহত পলাশ বলেন, ‘ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে একটি বৈধ বালুমহাল থাকলেও সন্ধ্যা হলেই তারা ড্রেজার নিয়ে নদীর তীরে চলে আসে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে শতাধিক বিঘা জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আজ সকাল পৌণে ১২টার দিকে কয়েকটি ড্রেজার নিয়ে ষোলআনী বিদ্যুৎকেন্দ্র সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছিল তারা। এ সময় একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার নিয়ে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী মান্নান, লালু, সৈকত, বাবু, আমজাদসহ কয়েকজন মহড়া দিচ্ছিল। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এসময় স্থানীয় লোকজন তাদের বাধা দিতে গেলে তারা এলাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় তারা প্রায় ১৭ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। গুলি থেকে বাঁচতে আমি নৌকা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আহত হই। পরে স্থানীয় লোকজন সন্ত্রাসীদের অবরুদ্ধ ফেললে সন্ত্রাসীদের আরেকটি দল ট্রলার নিয়ে এসে এলাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে ৩০-৩৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে অবরুদ্ধ সন্ত্রাসীদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এ সময় উত্তেজিত জনতা ‘আনাস বিন জুবায়ের ড্রেজিং প্রকল্প’ নামে একটি ড্রেজার আটক করে।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী কাউসার হোসেন বলেন,‘প্রথম দফা গুলিবর্ষণের পর স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে নদীর পাড়ে জড়ো করা হয়। স্থানীয় লোকজন সন্ত্রাসীদের একটি ড্রেজারের অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলেও তাদের সেরকম তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরে ইঞ্জিন চালিত আরেকটি ট্রলারে একদল সন্ত্রাসী এসে গুলি করতে করতে অবরুদ্ধ সন্ত্রাসীদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ উথান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নদীর এ এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। আজকে ফিল্মি স্টাইলে এলাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে প্রায় অর্ধশত রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে তারা। আমি যতদ্রুত সম্ভব অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘এলাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে গুলিবর্ষণ করার ঘটনার সত্যতা পেয়েছি আমরা। বেশ কয়েকজন আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। বিষয়টি আমি নৌ পুলিশকে জানিয়েছি। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।’
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলমের মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।
নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনি প্রথম আমাকে জানালেন। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’