বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও জোরদার হবে

আরিফুজ্জামান মামুন, বেইজিং (চীন) থেকে
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও জোরদার হবে

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিএনপির নেতৃত্বে সফররত বাংলাদেশি একটি প্রতিনিধিদল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার সান হাইয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও কৌশলগত সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে মতবিনিময় হয়। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার বাংলাদেশের ভৌগোলিক গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ এমন এক বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানে রয়েছে, যেখানে বন্ধুত্বপূর্ণ, নির্ভরযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী প্রতিবেশীর প্রয়োজন। চীন সবসময় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে ভালো

সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করলেও কিছু বিশেষ বন্ধু আছে, যাদের প্রতি আপনাদের আস্থা আরও বেশি। আমরা বিশ্বাস করি, চীন সেই বন্ধু হতে পারে। শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দুই দেশ পারস্পরিক উন্নয়নে কাজ করতে পারে। এ সময় প্রতিনিধি দলের নেতারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের সহযোগিতার প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার আহ্বান জানান।

চীনা ভাইস মিনিস্টার বলেন, বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে, তবে দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক হাজার বছরের পুরনো। সময়ের পরিক্রমায় রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও চীন-বাংলাদেশ জনগণের সম্পর্ক অটুট থেকেছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশ নির্বাচন ও প্রশাসনিক সংস্কারে ব্যস্ত থাকবে, নতুন সরকার গঠন করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতিগুলো স্থিতিশীল এবং অপরিবর্তিত থেকেছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করবে।

প্রতিনিধি দলের উদ্দেশে সান হাইয়ান বলেন, দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের একটি নির্দিষ্ট অংশের প্রতিনিধিত্ব করে এবং সরকারের ওপর তাদের প্রভাব রয়েছে। তাই, আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও এই সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে।

বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের অবদানের স্বীকৃতি জানানো হয় এবং ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া হয়। অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের সহায়তায় বড় অবকাঠামো প্রকল্প চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। প্রতিনিধি দলের নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান গার্মেন্টস শিল্পে সহায়তা হিসেবে সুতা ও কাঁচামালের সরবরাহ বাড়ানোর অনুরোধ করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি খাতে চীনের বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ ছাড়া চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের জন্য একটি কারখানা স্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়। বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও জোরদারের আহ্বান এবং চীনের নেতৃত্বে চলমান বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।

ড. মঈন খান বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন, যা দুই দেশের মধ্যে নতুন সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন করেছিল। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু, বাংলাদেশের প্রথম বড় অবকাঠামো প্রকল্প, যা চীনের সহায়তায় নির্মিত হয়েছিল। তিনি জানান, গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশে জিয়াউর রহমান চীন থেকে ধারণা নিয়ে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের সূচনা করেন, যা বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। এ ছাড়া কৌশলগত সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ও মুক্তিযুদ্ধের পর চীনের সহায়তায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী পুনর্গঠিত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। পরে মঈন খান বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিনন্দন জানান।

২১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির রয়েছেন। অন্য সাতটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান মো. শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান এজেডএম ফরিদুজ্জামান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আতাউল্লাহ আমিন।

এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা আলী আহসান জোনায়েদ, রাফি সালমান রিফাত ও মুখপাত্র রিয়াজ হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) গবেষক নাহিয়ান সাজ্জাদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিন, ডিপ্লোমেটিক করসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ডিকাবের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক আমাদের সময়ের কূটনৈতিক প্রতিবেদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন ও বার্তা সংস্থা ইউএনবির বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর রয়েছেন।