চুল পড়া রোধ করবেন যেভাবে

ডা. লুবনা খন্দকার
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
চুল পড়া রোধ করবেন যেভাবে

চুল পড়া একটি অত্যন্ত জটিল সমস্যা। প্রতিদিন আমাদের চেম্বারে অনেক রোগী আসেন এই সমস্যা নিয়ে। গড়ে প্রাপ্তবয়স্কের মাথায় প্রায় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার চুল থাকে এবং তার মধ্যে প্রতিদিন ১০০টি চুল পড়ে। সাধারণ পরিস্থিতিতে, মাথার ত্বকের চুল প্রায় তিন বছর বেঁচে থাকে (অ্যানাজেন পর্যায়); তার পরে তারা টেলোজেন বা বিশ্রামের পর্যায়ে প্রবেশ করে। তিন মাসের টেলোজেন সময়কালে চুলের গোড়াটি উঠে যায়, তার পরে চুল পড়ে যায়। তাই প্রতিদিন প্রায় ১০০টি চুল কমে যাওয়া স্বাভাবিক। চুলের জীবচক্রের এই বিশ্রামের পর্যায়ের শেষে চুলগুলো পড়ে যায় এবং একটি নতুন চুল এটি প্রতিস্থাপন করে এবং ক্রমবর্ধমান চক্রটি আবার শুরু হয়। সাধারণত, প্রায় ১০ শতাংশ মাথার চুল টেলোজেন পর্যায়ে থাকে। তবে বেশ কয়েকটি পরিস্থিতিতে চুলের বৃদ্ধির ছন্দ পরিবর্তিত করে ফলস্বরূপ, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ চুল যেতে পারে টেলোজেনে। তিন মাস পরে, মাথার চুলে বড় আকারের পরিবর্তন আসে। চুল পড়া সমস্যা দেখা যায়। নতুন চুল সাধারণত হারিয়ে যাওয়া চুল প্রতিস্থাপন করে, তবে এটি সবসময় ঘটে না ।

চুল পড়ে যাওয়া বছরের পর বছর ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করতে পারে বা হঠাৎ ঘটতে পারে। চুল পড়া স্থায়ী বা অস্থায়ী হতে পারে। চুল পড়ার অনেক ধরনের কারণ রয়েছে। কারণ খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। চুল পড়ার সর্বাধিক সাধারণ কারণ হলো বংশগত অবস্থা, যা বয়সের সঙ্গে বা বার্ধক্যের সঙ্গে ঘটে। চুল পড়া সাধারণভাবে কোনো রোগের লক্ষণ নয়। তবে থাইরয়েড ডিজিজ (যেমন- হাইপোথাইরয়েডিজম, হাইপারথাইরয়েডিজম), রক্তাল্পতা, মাথার ত্বকের দাদ চুলের ক্ষতি করতে পারে। কিছু ওষুধ, যেমনÑ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, গাউট, ডিপ্রেশন, হার্ট ডিজিজের চিকিৎসায় ব্যবহার হয় কিন্তু চুল পড়ার জন্য দায়ী। এছাড়া ক্যানসার কেমোথেরাপির মতো কিছু ওষুধের ফলে অস্থায়ীভাবে চুলের ক্ষতি হতে পারে। ওষুধগুলো বন্ধ করা হলে চুলের বৃদ্ধি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিছু ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে বা মেনোপজের সময় হরমোনের প্রভাবে নারীদের চুল পাতলা বা পড়ে যেতে পারে। গর্ভনিরোধক বড়ি বন্ধ করা, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ইত্যাদি হরমোন ভারসাম্যহীনতার কারণগুলোও নারীদের চুল পড়ার সঙ্গে জড়িত। সাধারণ টাক/বলডিং (অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া) পুরুষ ও নারীর মধ্যে ঘটে এবং এটি জিনগতভাবে সংবেদনশীল চুলের ফলিকলের টেস্টোস্টেরন বিপাকের প্রভাবের কারণে ঘটে। তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, বিশেষ করে জ্বর থাকলে, এইডস রোগ, অস্ত্রোপচার, দুর্ঘটনা এবং মানসিক চাপ (পরিবারের কারও মৃত্যু) চুল পড়ার সঙ্গে জড়িত।

হঠাৎ ওজন হ্রাস, অস্বাভাবিক ডায়েট নিয়ন্ত্রণ অথবা পুষ্টির ঘাটতি, যেমন- আমিষ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-ডি, জিংক, ক্যালসিয়াম, আয়রনের ঘাটতি চুল পড়ার জন্য দায়ী। মাথার ত্বকে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের রোগ, যেমনÑ মাথার সোরিয়েসিস, লাইকেন প্লানাস, সেবোরিক অ্যাকজিমা, লুপাস ইরাইথেমাটোসাস জাতীয় চর্মরোগ চুল পড়ার সঙ্গে জড়িত। চুলের স্টাইলজনিত কারণ, যেমনÑ চুল সোজা করা/আয়রনিং করা, চুলে বাহ্যিক রঙ করা, চুল শক্ত করে দীর্ঘ সময় বেঁধে রাখা চুলের পড়ার জন্য দায়ী। হট অয়েলিং হেয়ার চিকিৎসা, অনেকের চুল টেনে টেনে তোলার অভ্যাস এবং মানসিক আঘাতে চুল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মাথার ত্বকের বিশেষ চুলের ফলিকলগুলোর অটোইমিউন সিস্টেম ধ্বংসের মাধ্যমেও থোকা থোকাভাবে চুল পড়ে যেতে পারে।

পরামর্শ : আশাহত হওয়া যাবে না। চুল পড়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রয়োজনে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রতিদিন গোসলের আগে ও রাতে ঘুমানোর আগে চুল আঁচড়াতে হবে। মাথার তালু পরিষ্কার রাখতে হবে, মেডিকেটেড শ্যাম্পু দিয়ে সপ্তাহে দুদিন মাথার তালু ও চুল পরিষ্কার করতে হবে। সুষম খাবার খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। রাতে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। দৈনিক শরীরচর্চা করতে হবে। সর্বোপরি, মানসিকভাবে চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ

চেম্বার : আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা

হটলাইন : ১০৬৭২