কর্মসংস্থান বাড়াতে বিশেষ নজর

আবু আলী
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
কর্মসংস্থান বাড়াতে বিশেষ নজর

দেশের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বছরের শুরুতে বেকার মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও বছর শেষে তা বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে উঠে এসেছে, বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার বেড়েছে। এই সময়ে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে কর্মসংস্থান কমেছে। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬০ হাজারে। এ ক্ষেত্রে নারীর তুলনায় পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান কমছে। এর অন্যতম কারণ ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এবং উৎপাদন হ্রাস। সুদের হার বৃদ্ধির ফলে আমানতকারীরা কিছুটা লাভবান হলেও ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের জন্য সংকট তৈরি হয়েছে। উচ্চ সুদ দেওয়ার পরও ব্যাংকগুলো পর্যাপ্ত আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না, অন্যদিকে ঋণ সংকটে পড়ছে বেসরকারি খাত।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শ্রমশক্তির আকার ৫ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার। অথচ ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে এই সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ, এক বছরে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা ১৯ লাখ ৫০ হাজার কমেছে। বর্তমানে ৫ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ কর্মে নিয়োজিত, বাকিরা বেকার।

প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন, যার মধ্যে ১৩-১৪ লাখ মানুষ দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান পেয়ে থাকেন। বাকিরা প্রবাসে কাজের জন্য যান। ফলে দুই দশক ধরে বেকারের সংখ্যা সাধারণত ২৪-২৮ লাখের মধ্যে ওঠানামা করছে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা ৮ লাখ কোটি টাকার নিচে বাজেট প্রস্তাব করলেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাজেটের আকার কিছুটা বড় করা হবে। সরকারি ব্যয় বেশি সংকুচিত হলে কর্মসংস্থান বাড়বে না, তাই ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে উদ্যোক্তারা সহজে অর্থায়ন পেতে পারেন।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে, যা হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। নতুন বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।

অন্যদিকে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সরকার বিশেষ নজর দিচ্ছে। চলতি অর্থবছরে কয়েক দফা ভয়াবহ বন্যায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় আউশ ও আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৩ লাখ টন কম হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি খাদ্যশস্য মজুত গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৩ শতাংশ কম ছিল। তাই মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলতি অর্থবছরে ৯ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদন নির্বিঘœ রাখতে সারের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ভর্তুকি অব্যাহত রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি ২১ হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী বাজেটেও এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্য ভর্তুকির জন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৮ হাজার ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ওএমএস, টিসিবি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সারা বছর চলমান রাখার লক্ষ্যে এ খাতে বর্ধিত হারে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যা আগামী বাজেটেও অব্যাহত থাকবে।