বন্ধ হচ্ছে তো ইউক্রেন যুদ্ধ?

রুশ আগ্রাসনের ৩ বছর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বন্ধ হচ্ছে তো ইউক্রেন যুদ্ধ?

আজ ইউক্রেন যুদ্ধের তিন বছর পূর্ণ হয়ে গেল। ২০২২ সালের এই দিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তার সেনাবাহিনীকে ইউক্রেনে সর্বাত্মক সামরিক আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই তিন বছরে দুই দেশেরই বহু মানুষের প্রাণ ঝরেছে। সেনাসদস্য ছাড়াও বেসামরিক মানুষ হতাহতের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে ইউক্রেনের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক হারে।

সামরিক শক্তিতে অনেক পিছিয়ে থাকলেও তিন বছর প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে ইউক্রেন। এমনকি গত কয়েক মাস আগে রাশিয়ার ভেতরে ঢুকে কুরস্ক অঞ্চলে আক্রমণ করে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এই শক্তি দেশটি পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে এই যুদ্ধকে প্রলম্বিত করেছেন বলে খোদ তার উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন। তিনি ক্ষমতায় এসেই এই যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন। ক্ষমতায় ফিরলেই চব্বিশ ঘণ্টায় যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন, এই বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, একে শুধু চব্বিশ ঘণ্টার ফ্রেমে না বাঁধলে বলা যায়, ট্রাম্প এই যুদ্ধ বন্ধে প্রকৃত অর্থেই মনোযোগ দিয়েছেন। এমনকি যুদ্ধ চলতি সপ্তাহেই বন্ধ হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট।

সাংবাদিকদের লেভিট বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার দল এই যুদ্ধের উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার দিকে অত্যন্ত মনোযোগী। কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্স (সিপিএসি) থেকে ফিরে এসে আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই সপ্তাহের মধ্যেই সমাধান করতে পারব।’

কিন্তু ট্রাম্পের এই যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগে নাখোশ হয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি গত তিন বছরে একরকম ‘প্রতিরোধ যুদ্ধের নায়ক’ হয়ে ছিলেন। তবে ট্রাম্প এসে দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি রীতিমতো একজন অবৈধ প্রেসিডেন্ট, কারণ তার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে। এই কারণে সৌদি আরবে রুশ-মার্কিন শান্তি আলোচনায় খোদ জেলেনস্কি কিংবা তার কোনো প্রতিনিধি আমন্ত্রণ পাননি। একে বাঁকা চোখে দেখছে ইউরোপ। মহাদেশটির নেতারা আজ কিয়েভে যাচ্ছেন জেলেনস্কির পাশে দাঁড়াতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টাকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। এই অবস্থায় ইউক্রেনকে ভরসা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্ব বিভিন্ন দেশের নেতারা আজ কিয়েভে যাচ্ছেন।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্তা এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়ন কিয়েভে উপস্থিত থাকবেন। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে টুইট করে ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, মাল্টা এবং কানাডার নেতারা সরাসরি বা ভার্চুয়ালি এই বৈঠকে অংশ নেবেন বলে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা পলিটিকোকে জানিয়েছেন।

তবে ট্রাম্প খুব কড়া সুরে বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে ‘একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি’ আছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধে ওয়াশিংটন যে সাহায্য দিয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করাই তার উদ্দেশ্য। শনিবার ম্যারিল্যান্ডের অক্সন হিলে ট্রাম্প কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সেই এই অবস্থান ব্যক্ত করেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘ইউরোপ ইউক্রেনকে ১০০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার, কারণ আমাদের এক নির্বোধ, অদক্ষ প্রেসিডেন্ট ও অকেজো প্রশাসন ছিল। আমি চাই ইউক্রেন আমাদের কিছু দিক, সেই বিপুল অর্থের বিনিময়ে যা আমরা তাদের দিয়েছি। তাই আমরা বিরল খনিজ ও তেল চাচ্ছি। অথবা তারা আমাদের এমন কিছু দিক যা আমরা পেতে চাই।’

এদিকে রুশ সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। ক্রেমলিন থেকে প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, আজ তারা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে মাতৃভূমি, জাতীয় স্বার্থ এবং রাশিয়ার ভবিষ্যৎ রক্ষায় লড়াই করছে। রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী ও উন্নত করার কৌশল অপরিবর্তিত থাকবে।