ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটলে একুশের চেতনাই তা রুখবে: রিজভী (ভিডিও)
আবার যদি দেশে ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটে একুশের চেতনাই তা রুখবে বলে দৃঢ় প্রত্যায় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ প্রত্যায় ব্যক্ত করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা অম্লান, এই চেতনা কোনদিন ম্লান হবে না। যদি আবারও কোনো ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটে, কোনো ধরনের ডিক্টেটরের উত্থান ঘটে একুশে ফেব্রুয়ারি (চেতনা) আমাদের দামাল ছেলেরা এদেশের জনগনকে আবারও রাজপথে লড়াইয়ে নামতে উদ্ধুদ্ধ করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারি যুগ যুগ ধরে আমাদের কাছে এমন একটি চেতনা এমন একটি বৈপ্লবিক আদর্শ যা আমাদেরকে উদ্ধুদ্ধ করে। যেটাকে কখনোই ধবংস করা যায় না, যেটিকে কখনোই ম্লান করা যায় না। একুশে ফেব্রুয়ারি যুগ যুগ ধরে, অনাধিকাল ধরে যতদিন পৃথিবীর মানুষ এবং আমাদের সমাজ-সংসার থাকবে ততদিন একুশ আমাদেরকে সাহস যোগাবে এবং লড়াই করতে উদ্ধুব্ধ করবে।’
রিজভী বলেন, ‘একুশ মানে অধিকারের সংগ্রাম, একুশ মানে সাংস্কৃতিক সংগ্রামও। এটা ছিল জাতীয় স্বাধীনতার প্রথম সোপান, এই ভাষা আন্দোলনের সোপান পেরিয়ে আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছি স্বাধীনতার যুদ্ধেরদিকে। আমাদের মহা অর্জন আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। যখনই আমরা স্বৈরাচারের কবলের মধ্যে পড়েছি, যখন দেশে গণতন্ত্রহারা মানুষ বন্দিশালার মধ্যে বাস করেছে তখন ৫২ আমাদের উদ্ধুব্ধ করেছে, আমাদের প্রেরণা জাগরিত করেছে।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিনি বলেন, ‘একুশের প্রেরণাতে আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি,অনেক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে, তাদের রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলন করেছে ছাত্র-জনতা। ছাত্র জনতার এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ভয়ংকর রক্ত পিপাসু স্বৈরাচার, ভয়ংকর দুর্নীতিবাজ সরকার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।’
এই সরকারের দায়িত্ব একটা নির্বাচন- উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে একটি অবাধ নির্বাচন করা এবং তার সঙ্গে আরও কিছু আনুসাঙ্গিক কাজ আছে, বিভিন্ন সংস্কার আছে, যেটা প্রয়োজনীয় সংস্কার যেটা যেসময় আছে সেই সময় করা সম্ভব। কিন্তু জনগণকে আশ্বস্তকরতে হবে যে, দেশের জনগণ এবং তরুণ প্রজন্ম আজকে যাদের ১৮ বছর বয়স, যাদের একুশ বছর বয়স তারা কেউ ভোট দিতে পারেনি, ভোট কী তারা জানে না। কারণ ১৭ বছর ভোট হয়েছে চতুস্পদজন্তু দিয়ে। ভোট কেন্দ্রে দিনের ভোট রাতে করেছে। গণতন্ত্রকে ধবংস করার জন্য নির্বাচন কমিশন ধবংস করেছে, ভোট ধবংস করেছে। এগুলো থেকে উত্তরণে ঘটিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করার জন্যই একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন- এটা নিশ্চিত করতে হবে।’
সংসদ নির্বাচনই আগে দরকার উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘আগে স্থানীয় সরকার না পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন- এই বির্তকে আমার মনে হয়, অন্তর্বতীকালীন সরকারের অংশ গ্রহণ করা উচিত নয়। বরং এই সরকারকে প্রথমেই জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণ তাদের নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে যে সরকার গঠন করবে তারাই নির্ধারণ করবে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন না অন্যান্য নির্বাচন কখন হবে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া তথ্য সঠিক নয় জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু নেতা বা কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখছেন যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি হবেন- এটা তাদের ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। কিন্তু এটা আমাদের দল বিএনপির অবস্থান নয়। এই কথাটা আপনাদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলাম।’
এর আগে রিজভীর নেতৃত্বে ভোর সাড়ে ৬টায় নিউ মার্কেটের কাছে বলাকা সিনেমা হলের সামনে থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিশাল প্রভাত ফেরী আজীমপুর কবরাস্থানে যায়। সেখানে ভাষা শহীদের কবরে পুস্পমাল্যঅর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসে।
নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে শহীদ মিনারের বেদীতে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিনআলম, মীর সরাফত আলী সপু, আমিনুল হক, মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, ইশরাক হোসেন সহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
রাতে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী।