জানালেন তদন্ত কমিশনপ্রধান /
বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে হাসিনা-মইনসহ অনেকেই প্রয়োজন
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘটনা তদন্তের অংশ হিসেবে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেকেই প্রয়োজন বলে জানালেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডে সেনাসদস্যসহ ৩৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন।
বিভিন্ন ব্যক্তির বিদেশ গমনে তদন্ত কমিটির নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে জানতে চাইলে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘এ ঘটনার তদন্তে আমরা যাদের যাদের প্রয়োজন মনে করছি তাদেরকে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কারণ যে কোনো সময় কাউকে জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন হতে পারে। জিজ্ঞাসা করার সময় যেন আমরা তাদেরকে সহজেই পাই সেজন্য বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের সংখ্যা আমরা এই মুহূর্তে বলছি না।’
পিলখানা হত্যাকাণ্ড তদন্তে গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন বেশ কয়েকটি বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি লেখা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি যে এখানে যাদের আমাদের প্রয়োজন তাদেরকে যেন আমরা ফেরত আনতে পারি।’
আপনারা আসলে কোন ধরনের বিদেশি দূতাবাস বলছেন? তারা কি এশিয়ার বা পার্শ্ববর্তী দেশের দূতাবাস, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি বিদেশে লুকিয়ে থাকেন, তার অবস্থান লোকেট (চিহ্নিত) করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা তো কঠিন বিষয়। এই বিষয়গুলো সময়সাপেক্ষ। কারণ আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যেন তাদের পাই।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
দূতাবাসগুলোকে সহযোগিতার জন্য চিঠি দেওয়া কি শুধু পলাতকদের ধরে আনা, চিহ্নিত করা বা জিজ্ঞাসাবাদ, যোগাযোগ করার জন্যই? জানতে চাইলে আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিদেশি দূতাবাসগুলোর কাছ থেকে অনেক ধরনের সহযোগিতা, ইনফরমেশন চাই। আমরা সব ধরনের তথ্য চাই।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেমন জেনারেল মইন ঘটনার সময় চিফ অব আর্মি (সেনাপ্রধান) ছিলেন। তাকে আমাদের খুব দরকার, তার স্টেটমেন্ট আমাদের খুব দরকার। কারণ কেন অপারেশনটা সেখানে ফেল করল, কেন এত মানুষ, সেনা অফিসারকে হত্যা করা হলো? আবার শেখ হাসিনাও ভারতে পালিয়ে গেছেন। জেনারেল মইন ও শেখ হাসিনাসহ এমন লোকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার চ্যালেঞ্জগুলো আমরা দেখছি। আমাদের কাছে অন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। এই লোকগুলোকে কানেক্ট করা চ্যালেঞ্জ।’
বিডিআর বিদ্রোহের পর বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। সেসব তদন্ত কমিটি রিপোর্টও জমা দিয়েছে। সেসব রিপোর্ট আপনারা আমলে নিচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (বর্তমানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা) ও সচিব আনিসুজ্জামানের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। আমরা এগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এরমধ্যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। সচিব আনিসুজ্জামানের তদন্ত রিপোর্ট পাইনি, তবে সামারি পেয়েছি।’
হত্যাকাণ্ডের পর মামলায় যারা কারাগারে ছিলেন, কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছেন। ঘটনা সম্পর্কে তাদের তদন্ত কমিশন জিজ্ঞাসাবাদ করবে কি না? জানতে চাইলে আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করব না। তবে যারা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তারা চাইলে আমাদের তথ্য দিতে পারেন, অথবা ওয়েবসাইটেও জানাতে পারেন। আমাদের পরিকল্পনা আছে আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলার।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
আপনারা কি ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে দুইটি বাধা তো আছেই। একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়, আরেকটি বিদেশে পালিয়ে যাওয়াদের কানেক্ট করা, জিজ্ঞাসাবাদ করা। অভ্যন্তরীণটা হয়তো সহজেই সম্ভব, কিন্তু বিদেশে পালানোদের কানেক্ট করা তো কঠিন। সেজন্য হয়তো বাড়তি সময় লাগতে পারে।’
জেনারেল মইন বই লিখেছেন, ইউটিউবে তার বক্তব্যের ভিডিও প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেছেন- বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত বিষয়ে তিনি সহযোগিতা করবেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কি না? জানতে চাইলে তদন্ত কমিশন প্রধান বলেন, ‘তিনি যা বলেছেন তাই আমরা কেন বিশ্বাস করব? তিনি যা বলেছেন, আসুক আমাদের সামনে বলুক। তখন জানার চেষ্টা করবো। তাকে ফেরানোর জন্য দূতাবাসকে চিঠি দিয়েছি। কোনো উত্তর এখনো পাইনি। পেলে বলতে পারব।’
শেখ হাসিনাকে ফেরাতে কোনো চিঠি ভারতকে দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারত বিষয় না, আমরা তো বিদেশে পালিয়ে যাওয়াদের দরকার বলে দূতাবাসগুলোকে চিঠি দিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তো জানে, আমরা কাকে কখন চাই। তবে আমাদের আগে নিশ্চিত হতে হবে, কে কোথায় আছেন। এরপর আমরা যোগাযোগ করব।’
পাঁচদিন পরই বিডিআর বিদ্রোহের ১৬ বছর। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির পরই চাউর হয়, বিডিআরকে ভেঙে ফেলা ও বাহিনীর সক্ষমতা নষ্ট করার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেছে। এ বিষয়টি তদন্ত করছেন কি না? সেটি করলে তা কোন পর্যায়ে রয়েছে? জানতে চাইলে আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র যদি থাকে তা বের করার জন্য। এটা আমরা সবাই জানি, সেজন্য অপরাধ তদন্তে কোনো দেশ বা কোনো ব্যক্তি বা কোনো বিশেষ অর্গানাইজেশনকে আমরা সামনে রাখছি না। আমরা তদন্ত করছি, যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় কেউ জড়িত আছে সেটা অবশ্যই আপনারা জানতে পারবেন। তথ্য দিতে সবাইকে আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছি কমিশনের পক্ষ থেকে। আমরা অনুরোধ করছি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। আমরা যে ওয়েবসাইট (https://www.bdr-commission.org/) খুলেছি সেখানে ভালো সাড়া পাচ্ছি।’
পিলখানার ভেতরে অনেক সেনা অফিসার ও তাদের পরিবার জিম্মি ছিলেন। অনেকে হতাহতের শিকার হয়েছেন। আবার অনেকে ফিরে এসেছেন। জীবিত ফিরে আসাদের লাইভ অভিজ্ঞতা আপনারা শুনেছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তিনজন শহিদ সেনা অফিসারের পরিবারের বক্তব্য শুনেছি। যেমন বলতে পারি শহিদ মেজর জেনারেল শাকিলেন ছেলে বক্তব্য দিয়ে গেছেন।’