বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির গেট অবরুদ্ধ করে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ গ্রামবাসীর অবস্থান
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ গ্রামের মানুষ ক্ষতিপূরণসহ ৬ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে খনির প্রধান গেটে অবস্থান নিয়ে তারা এ কর্মসূচি শুরু করে। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে খনির ভেতরে অবস্থানরত কর্মকর্তা কর্মচারীসহ তাদের পরিবার। খনির নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা অবস্থান করছে।
স্থানীয়রা জানান, কয়লা উত্তোলনের জন্য ভূগর্ভে মাইন বিস্ফোরণের সময় ভূপৃষ্ঠে কম্পনের সৃষ্টি হয়। কম্পনের ফলে বাড়িঘরে ফাটলসহ বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ভূমি অবনমন, সুপেয় পানির সংকট, রাস্তাঘাট টেকসই না হওয়া, গাছের ফলমূল উৎপাদন ব্যহত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিগত দেড় বছর ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন করলেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গ্রামবাসী এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করাছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে খনির পার্শ্ববর্তী বৈগ্রাম, কাশিয়াডাঙা, মোবারকপুর, জব্বারপাড়া, রসুলপুর, চক মহেশপুর, চৌহাটি, সাহাগ্রাম, দূর্গাপুর, হামিদপুর ও পূর্ব শেরপুরসহ মোট ১২টি গ্রামের সহস্রাধিক নারী পুরুষ খনি গেটে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে।
এ সময় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল বেরুনী, সহসভাপতি আলী হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মো. হোসেন আলী, সাংগাঠনিক সম্পাদক আবু শিবলী প্রমুখ।
বক্তারা দাবি করেন, ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে ভূগর্ভের নিচে মাইন বিস্ফোরণ করতে হয়। সেই মাইন বিস্ফোরণে প্রায় ৩-৪ মাইল এলাকা পর্যন্ত কেঁপে উঠে। এতে ১২টি গ্রামে কাঁচা পাকা বাড়িঘর প্রতিনিয়ত ফেটে যাচ্ছে। রাতে পরিবার পরিজন ও ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে নিয়ে আতঙ্কে ঘুমাতে হচ্ছে। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করছেন না। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে গত সেপ্টেম্বর মাসে দেখা করতে গেলে তিনি দেখা করেননি।
সংগঠনটির ৬ দফা দাবিগুলো হলো- অবৈধভাবে ভূগর্ভে বিস্ফোরক ব্যবহারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সকল রাস্তাঘাট মেরামত করা, এলাকার বেকার ছেলে ও মেয়েদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত সকল এলাকায় সুপেয় পানির সমস্যা সমাধান করা, ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে যাদের ভূমি থেকে কয়লা উত্তলন করা হচ্ছে তাদের কয়লা উৎপাদন বোনাস ৫ শতাংশ দেওয়া ও মাইনিং সিটি অথবা উন্নতমানের বাসস্থান তৈরি করা।
এদিকে খনির প্রধান গেটসহ সব গেটে আন্দোলনকারী গ্রামবাসী অবস্থান করায় এক প্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে খনির অভ্যন্তরে অবস্থানরত আবাসিক কর্মর্কর্তা কর্মচারী ও তাদের পরিবার। খনিটি সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা অবস্থান করছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম সরকার জানান, খনি সংলগ্ন কিছু গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান দেওয়া হয়েছে। তবে এখন দূরের ১৩টি গ্রামও ক্ষতিপূরণ দাবি করছে, যা যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রামবাসীদের দাবি অনুযায়ী নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা এক বছর সময় চেয়েছে। তবে গ্রামবাসীরা এত দীর্ঘ সময় দিতে নারাজ।
এমডি আরও জানান, খনি থেকে এত দূরে কম্পনের সুযোগ নেই এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বোর্ডের হাতে।
আন্দোলনকারীদের অবস্থান কর্মসূচির কারণে খনির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খনি থেকে বের হতে পারছে কি না? এমন পশ্নের জবাবে এমডি বলেন, দুটো গেটই বন্ধ ছিল। পশ্চিম দিকের গেইটটি আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছে। পরে দক্ষিণ দিকের গেটটি পুলিশের সহযোগিতায় খুলেছি।