স্থানীয় নির্বাচন আগে করা নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে

শাহজাহান মোল্লা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
স্থানীয় নির্বাচন আগে করা নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে


অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দ্রুত কিংবা বিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক চলে আসছে। এ নিয়ে ভোটের হিস্যায় দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলাম দুই মেরুতে অবস্থান করছে। এর মধ্যে নতুন বিতর্ক যোগ হয়েছে- আগে জাতীয় নির্বাচন হবে, নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে। তাতেও বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী বিপরীত অবস্থানে। বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে- জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো নির্বাচন তারা মানবে না। বিএনপির সমমনা দলগুলোও আগে জাতীয় নির্বাচনে পক্ষে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার বাম গণতান্ত্রিক জোটও আগে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এর বিপরীত জামায়াত ইসলামী জানিয়েছে, তারা আগে স্থানীয় নির্বাচন চায়। অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানও তাই। এর মধ্যেই গতকাল স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষ নেওয়ায় এই বিতর্ক আরও গতি পেয়েছে।

এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে বলেছে- জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন হওয়া দরকার। তবে এই নির্বাচন যারা আয়োজন করবে, সেই নির্বাচন কমিশন এই মুহূর্তে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে না। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন এক অনুষ্ঠানে বলেছেন স্থানীয় নির্বাচন করতে এক বছর সময় লাগবে। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে সময় নষ্ট করতে চাই না।

অনেকেই মনে করেন, দলীয় সরকারের অধিনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের মনোনিত প্রার্থীরা মেয়র, চেয়ারম্যান হয়ে জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব সৃষ্টি করে। তাই সরকার চায় আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন

করে অন্তত সবগুলো সিটি করপোরেশনে দলীয় প্রভাবমুক্ত মেয়র নির্বাচিত হোক। যেহেতু সরকার পরিচালনায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় ভূমিকা থাকে, তাই ছাত্ররা চান তাদের পছন্দের লোক অন্তত সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে বসুক। এই থেকে তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা আছে।

নির্বাচন নিয়ে এ্ই বিতর্কের মধ্যে জড়াতে চান না স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, যেহেতু আমরা সংস্কার কমিশনে ছিলাম, তাই এই বিষয়ে কোনো বিতর্কে জড়াব না। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কোনটা আগে করবে। সরকার যেটা চাইবে সেটাই হবে।

এদিকে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে জনমত তৈরিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা অনলাইন জরিপ চলছে। সেখানে অনেকেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের পক্ষে মতামত তুলে ধরেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে মতামত তুলে ধরেছে। অনেকে মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা যাচাই করতে হলেও অন্তত ট্রায়াল রান হিসেবে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে পারে।

গতকাল ডিসি সম্মেলনে অংশ নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এতে তারা সমস্যায় আছেন। তারা স্থানীয় নির্বাচন চান। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হোক, এটা চাই। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার বিষয়টা দেখছে। কারণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতেও স্থানীয় নির্বাচন হওয়া জরুরি।

এর আগে ২৬ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনের জন্য এক বছর লাগবে। আমরা তো সেই প্রস্তুতি শুরু করিনি। সরকারও তো অনুরোধ করেনি। কেন আমি এক বছর সময় নষ্ট করব?’

জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো নির্বাচন মানবে না বিএনপি- এ কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘জাতীয় সরকার নির্বাচনের আগে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দিলে আওয়ামী লীগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। প্রবলেম শুরু হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’

নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠকের পর জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার বলেন, ‘জনগণ চায় স্থানীয় সরকার সচল হোক, আমরাও চাই জাতীয় নির্বাচনের আগে হোক স্থানীয় নির্বাচন।’