কুয়েটে ছাত্রদল-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংঘর্ষ, বিজিবি মোতায়েন
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের জেরে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া কুয়েট ও এর আশপাশে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর বিপুল সদস্য উপস্থিত আছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ আছে। তবে ছাত্র রাজনীতি চালুর পক্ষে গতকাল সোমবার লিফলেট বিতরণ করে ছাত্রদল। এদিকে, আজ ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটাই, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ সময় ছাত্রদলের কর্মীরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ উত্তেজনা কুয়েটের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। কুয়েট পকেট গেট এলাকার দিকে বহিরাগতরাও ছাত্রদলের পক্ষ নেন বলে জানা গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির মুখপাত্র মিরাজুল ইসলাম ইমন বলেন, ‘বিনা উসকানিতে ছাত্রদলের কর্মীরা ছাত্রদের রক্ত ঝড়িয়েছে। তারা কুয়েটের সদস্যসচিব জাহিদ ভাইকে রামদা দিয়ে ১০টা কোপ দিয়েছে, জেলার আহ্বায়ক তাসনিম ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব রাতুলের পা ইট দিয়ে থেতলে দিয়েছেন। অসংখ্য ছাত্র আহত। সব তথ্য পরে দিতে পারব।’
তবে খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি দাবি করেন, ছাত্রশিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে গেলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের বাঁধা দেন। পরে তাদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খুলনা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন। তিনি বলেন, ‘কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে বলে শুনেছি। আমরা হামলার নিন্দা ও জড়িতদের বিচার চাই।’
কুয়েটের ঘটনা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ‘কুয়েটে ছাত্রদল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ স্টাইলে যে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল নিজেদের রাজনৈতিক কবর রচনার পথেই অগ্রসর হলো।’
আর কোনো সংগঠনের নাম উল্লেখ না করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘যে ছাত্রলীগ হয়ে উঠতে চাইবে, তার পরিণতি ছাত্রলীগের মতোই হবে।’
এদিকে, কুয়েটের ঘটনায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদল উল্লেখ করে, ‘তিন দিন আগে কুয়েট ক্যাম্পাসের পাশেই ছাত্রদল সদস্য সংগ্রহ ফর্ম বিতরণ করে। তার প্রতিবাদে আজ কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্ডারগ্রাউন্ডে শিবির মিছিল করার ঘোষণা দেয় ও মিছিল করছিল। ওই সময় মিছিলের সামনে দিয়ে কুয়েটের তিন শিক্ষার্থী যারা ছাত্রদলের সমর্থক ক্লাস শেষ করে বাসায় যাচ্ছিলেন। তখন মিছিলকারীরা ছাত্রদলের তিনজনকে কোনো কারণ ছাড়াই মারতে মারতে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তাদের বাঁচাতে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে তাদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় স্থানীয়দের সঙ্গে শিবির ও বৈবিছায়াদের সংঘর্ষ হয়। এতে সেখানে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোক আহত হয় বলে শুনেছি।’
এতে আরও বলা হয়, ‘কুয়েটে শিবির ও বৈবিছায়ার কমিটি থাকলেও ছাত্রদলের কমিটি নেই।
ঘটনার ব্যাপারে খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’