চোখের সমস্যা ছাড়াও যেসব কারণে মাথাব্যথা হয়

অধ্যাপক ডা. মো. ছায়েদুল হক
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
চোখের সমস্যা ছাড়াও যেসব কারণে মাথাব্যথা হয়

প্রায় সবারই কমবেশি মাথাব্যথা হয়। আর একবার মাথাব্যথা শুরু হলে কেউ কেউ বিশ্রাম নেন। চা পানও করেন অনেকে। কেউ কেউ সেবন করেন প্যারাসিটামল জাতীয় বড়ি। যদি এমন হয়Ñ পড়তে বসলেই মাথাব্যথা, প্রতিদিনই হয় অথবা সহজে সারছেই না কিংবা মাথাব্যথার সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ আছে- তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

আমাদের দেশে রেফারেল সিস্টেম না থাকায় সবাই চান প্রথমেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হয় বলে তা নিয়ে রোগী কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন, দ্বিধাদ্বন্দ্বে হয়ে পড়ে যান। মাথাব্যথার গতিপ্রকৃতি খেয়াল করলে অনেক সময় বোঝা যায় এর কারণ কী? সে ক্ষেত্রে কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন, তা নির্ধারণ করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

মাইগ্রেনের ব্যথা দিয়ে শুরু করা যাক। মাইগ্রেনের মাথাব্যথায় থাকে বমির ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা ইত্যাদি। অনেকের মাথাব্যথার শুরুতে কানে এক ধরনের বোঁ বোঁ শব্দ অনুভূত হয়। মাথার একপাশ বা দুপাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। দুশ্চিন্তা, ক্ষুধা, কম ঘুম, বিশেষ কোনো খাবার, পরিবেশ (উৎকট গন্ধ, শব্দদূষণ, আবহাওয়া পরিবর্তন) ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মেয়েদের হরমোন পরিবর্তনের কারণেও এটি হতে পারে। কিছু কিছু বিষয় মাথাব্যথা উস্কে দেয়। এটিকে বলা হয় ট্রিগারিং ফ্যাক্টর। নির্দিষ্ট সময় পর নিজ থেকে এ মাথাব্যথা সেরেও যায়।

সাইনাসজনিত মাথাব্যথা হয় সাইনুসাইটিস বা সাইনাসের প্রদাহের কারণে। সাধারণত কপাল ও চোখের পাশে একটু গভীরে অনুভূত হয় এবং মাথা নড়াচড়া করলে বা কাশি দিলে ব্যথার তীব্রতা বাড়ে। এ ব্যথা সকালের দিকে বেশি অনুভূত হয় এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার তীব্রতা কমে যায়। একইসঙ্গে ঠাণ্ডা-কাশি ও অ্যালার্জির সম্পর্ক থাকে।

নিউরোলজিক্যাল বা মস্তিষ্কে টিউমার হলে তীব্র মাথাব্যথা, সঙ্গে প্রায়ই বমি এবং এটি দিনে দিনে খারাপের দিকে যেতে থাকে এবং অনেক সময় দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়। এমনটি হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

এটা ঠিক যে, চোখের সমস্যার কারণেও মাথাব্যথা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো আই স্ট্রেইন এবং দৃষ্টি সমস্যা। আই স্ট্রেইন হলো চোখের অতিব্যবহারজনিত একধরনের চোখের অবসাদ বা ক্লান্তি, যেখানে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। দৃষ্টি সমস্যার কারণে, সঠিক নিয়মে চশমা না পরলে, দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে (মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি) থাকলে, পড়াশোনা, ড্রাইভিং ইত্যাদি কারণেও আই স্ট্রেইন হতে পারে। আই স্ট্রেইনের মাথাব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা খুব তীব্র হয় না। সাধারণত বিশ্রামে বা কর্মবিরতিতে কমে যায়। দিন শেষে বা সন্ধ্যার সময় আই স্ট্রেইনের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে অন্যান্য সাময়িক উপসর্গ, যেমনÑ চোখ জ্বালাপোড়া, চোখে পানি পড়া, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, চোখে শুষ্কভাব, ঘাড়ব্যথা ইত্যাদি থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্ক্রিন টাইম ও রাত জাগা কমিয়ে ফেলতে হবে। যারা মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি স্ক্রিনে বেশি সময় ধরে কাজ করেন, তাদের জন্য চোখে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। প্রয়োজনে দৃষ্টি পরীক্ষার জন্য চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক : অধ্যাপক, চক্ষুরোগ বিভাগ

মার্কস মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা

চেম্বার : আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার

আদাবর লিংক রোড, ঢাকা

০১৯২০৯৬২৫১২