নিয়মনীতির ধার ধারেন না শাহ্ মখদুমের ম্যানেজার

বেবিচক চেয়ারম্যানের দপ্তরে কর্মচারীদের লিখিত অভিযোগ

গোলাম সাত্তার রনি
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
নিয়মনীতির ধার ধারেন না শাহ্ মখদুমের ম্যানেজার

রাজশাহীর শাহ্ মখদুম বিমানবন্দরের ম্যানেজার মোসা. দিলারা পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন অন্ত নেই। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, দলীয়করণ এবং আবাসন বাণিজ্যসহ তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ গত মাসের শেষভাগে জমা পড়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিমানবন্দরের কর্মচারীরা। এতে কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হেনস্তা; নিজের মনঃপূত না হলে শোকজ, সাময়িক বরখাস্ত ও বদলি; নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকলেও পছন্দের লোক দিয়ে দপ্তর পরিচালনা এবং চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে দীর্ঘদিন এক স্টেশনে থাকার অভিযোগ এসেছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ তদন্তে কমিটি করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে দিলারা পারভীন এসব অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত না।

বেবিচক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শাহ্ মখদুম বিমানবন্দরের ম্যানেজারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে।

বেবিচক চেয়ারম্যানের দপ্তরে লিখিত অভিযোগে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার বলেন, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হলেও তাকে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। তার বাড়ি বগুড়া হওয়ায় তাকে নানা ভয়ভীতি দেখানো হয়। কর্মকর্তা অনুপ রায়, মাহফিজুর রহমান ও নাসির আহমেদকে দিয়ে সর্বক্ষেত্রে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন ম্যানেজার দিলারা পারভীন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাসা বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাসা খালি থাকার পরও তাকে (সেলিনা) বরাদ্দ না দিয়ে ভাড়া বাসায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধভাবে টাকার বিনিময়ে বেনামে সরকারি বাসা ভাড়া দিয়ে রেখেছেন দিলারা পারভীন। বিমানবন্দরের স্টাফ নন এমন অনেকে এসব বাসায় ভাড়া থাকছেন। অথচ এখনও বিমানবন্দরের অনেক কর্মকর্তা বাসা চেয়ে পাচ্ছেন না।

অভিযোগ রয়েছে, ম্যানেজার দিলার পারভীনের শ^শুরবাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ার সুবাদে ৫ আগস্টের আগে অধস্তন সব কর্মচারীকে তটস্থ করে রাখতেন তিনি। ২ বছর পর পর বদলির নিয়ম থাকলেও গোপালগঞ্জের পরিচয়ে কোনোরকম বদলি ছাড়াই প্রায় ৬ বছরের বেশি সময় ধরে স্বপদে বহাল আছেন তিনি। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলেছেন তিনি। শাহ্ মখদুমের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদারদের কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হারে ঘুষ গ্রহণ করেন তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা। কেনাকাটা ও প্রতিষ্ঠানের পুরনো সরঞ্জামাদি বিনা টেন্ডারে বিক্রি এবং টাকার বিনিময়ে সাধারণ যাত্রীদের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগও করে দেন তারা। এ ছাড়া পুরনো লোহা গোপনে বিক্রি, ক্যান্টিন বরাদ্দে অনিয়ম, রাতের আঁধারে মাছ চুরি হচ্ছে তাদের ইশারায়। নামমাত্র যে কর্মচারী কল্যাণ সমিতি রয়েছে, সেটিরও ম্যানেজার দিলার পারভীন ও তার পছন্দের মিজানুর রহমান ও মনসুর আলমের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

শাহ্ মখদুম বিমানবন্দরের অফিসারদের জন্য আবাসিক কক্ষের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে রয়েছে অব্যবস্থাপনা। সিনিয়রিটি অনুযায়ী বাসা বরাদ্দ না দিয়ে নিজের পছন্দসই ব্যক্তিদের বাসা ভাড়া দিয়ে রেখেছেন তারা। এমনকি মহিলা অফিসারকে বাসা না দিয়ে চাটুকার কর্মচারীদের বিনা ভাড়ায় বাসায় থাকতে দেওয়া হয়। বর্তমানে অনেক কর্মকর্তা বিমানবন্দরের বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকলেও অধিকাংশ ডরমেটরি বহিরাগতদের দখলে। আবার ব্যাচেলর আবাসিক কক্ষ ফ্যামিলি হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দিলারার নির্দেশে। এ ছাড়া নিয়মিত অফিস না করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, বিমানবন্দরের অপারেশনাল গাড়ি পারিবাবির কাজে ব্যবহার করে থাকেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানান, বিমানবন্দরে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম করে মোটা অংকের টাকা লুটপাট, জ্বালানি তেল চুরি, গাড়ি মেরামত ও স্টেশনারি সামগ্রী ক্রয়ের নামে ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে টাকা আত্মসাৎ, কোনো সভা-সেমিনার না করে মিটিংয়ের নামে বিলে স্বাক্ষর নিয়ে বিল-ভাউচার তৈরি করেন দিলারা পারভীন। সুষ্ঠু তদন্ত করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে।

এসব বিষয়ে মুঠোফোনে দিলারা পারভীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর আগেও আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর কোনো সত্যতা পায়নি কর্তৃপক্ষ। নতুন অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে, আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত না।’

বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবির ভুইয়া বলেন, শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ম্যানেজারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। অভিযোগগুলো আবারা তদন্ত করা হবে। সেখানে অকশন নিয়ে ঝামেলা ছিল, কিছুটা বৈষম্য রয়েছে। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।