‘জনগণ চূড়ান্তভাবে বিরক্ত হওয়ার আগেই দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিন’

নিজস্ব প্রতিবেদক
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:০০
শেয়ার :
‘জনগণ চূড়ান্তভাবে বিরক্ত হওয়ার আগেই দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিন’

জনগণ চূড়ান্তভাবে বিরক্ত হওয়ার আগেই নিজেদের দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। 

আজ মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস; ডেভিল হান্ট, সেন্ট্রাল কমান্ড ও নাগরিক প্রত‍্যাশার হিসাব-নিকাশ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।  

বিজয় নগরস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের গত ৬ মাস ছিল নানা প্রতিকূলতাময়। ১৮০ দিনে ১৫০টির মতো আন্দোলন ও অবরোধ গণতান্ত্রিকভাবে তারা মোকাবিলা করেছে। ভারতের ষড়যন্ত্রে সৃষ্ট বন‍্যা ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত বাঁধানোর ঝুঁকি,ব‍্যাপক নিয়োগ-বদলি, প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চিতদের পদোন্নতি ও পদায়ন, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্প বাতিল, হাজার হাজার মিথ‍্যা মামলা প্রত‍্যহার, অন‍্যায়ভাবে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, দেউলিয়া হওয়া আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো সর্বোপরি ফ‍্যাসিবাদের রেখে যাওয়া অনিয়ম ও লুটপাটের ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে ঘুরে দাঁড় করানোর বিরাট চ‍্যালেঞ্জ ছিল তাদের কাঁধে। ৬ মাসে এসব কাজের বিরাট ধকল গেছে এই সরকারের উপর; সেজন্য তাদেরকে অশেষ ধন‍্যবাদ ও দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাদের প্রতি আবারও আমাদের সমর্থন পূণর্ব‍্যক্ত করছি। কিন্তু কথা হলো সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা কী শুধু এসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? নিশ্চয়ই তা নয়।’ 

তিনি বলেন,‘ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। তারা রাষ্ট্রের মেরামত চেয়েছে। তারা শুধু শাসকের পরিবর্তন নয়, শাসন ব‍্যবস্থার পরিবর্তন চেয়েছে। ফ‍্যাসিবাদী ব‍্যবস্থার বিলোপ ছিল তাদের অন‍্যতম আকাঙ্ক্ষা।’ 

সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তিগুলোর অনৈক‍্যে হতাশা প্রকাশ করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে প্রথম দিনই বলেছিলাম আপনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য একটি টিম গঠন করুন, কিন্তু একজন উপদেষ্টার অনীহার কারণে তিনি সেটা করেননি। যে দলগুলো জুলাই-আগস্টে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছে তারা আজ একে অপরকে হেয় করে কথা বলছে। অযথা বাক্ যুদ্ধে জড়িয়ে তারা বিভেদ বাড়াচ্ছে; এর দায় সরকার এড়াতে পারে না।’

 সম্প্রতি সরকারের নেওয়া ‘ডেভিল হান্ট’কে ‘ডিলেইড ডেভিল হান্ট ইনিশিয়েটিভ’ উল্লেখ করে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘এই অপারেশনের ফলে খুব বেশি ফল আসবে বলে মনে হচ্ছে না। সরকারের উচিত ছিল শুরুতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া। প্রথমদিকে এ ব‍্যবস্থা নিলে বহু ডেভিল পালাতে পারতো না, আর চাঁদাবাজি ও দখলবাজি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা যেতো।’

সব বাহিনীর সমন্বয়ে সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার গঠনের বিষয়টিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ আছে সেটা দেখতে চায়।’

পলাতক ফ‍্যাসিবাদী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের উপুর্যুপুরি হুমকি-ধামকি-উসকানির বিষয়ে কতিপয় রাজনৈতিক দলের সুবিধাবাদী অবস্থানের সমলোচনা করে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘কোন কোন নেতার দায়সারা গোছের বক্তব‍্য আমাদের খারাপ লেগেছে। তারা একদিকে সুশীল অবস্থান নিচ্ছেন, অন‍্যদিকে তাদের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণেই ভাঙচুরসহ বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’

এ ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন, ‘গুম, খুন ও গণহত্যাকরীদের যেকোনো তৎপরতার ব‍্যপারে নমনীয়তার কোনো সুযোগ নাই। বিচার ও ক্ষমা চাওয়ার আগে খুনীদের অন‍্য যেকোনো বক্তব্য ও কার্যক্রমের ব‍্যপারে আমরা কড়া অবস্থানের পক্ষে, তবে সেটা অবশ‍্যই হতে হবে ন‍্যায়সঙ্গত ও রাজনৈতিকভাবে বুদ্ধিদীপ্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বলছে-৫ মাসে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, অর্থনীতির ১০ শতাংশ উন্নতি হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ কমে আসবে। মজুদ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলতি বছরে নয় লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হবে! আমরা এসবের প্রতিফলন বাজারে দেখতে চাই। রমজানে যাতে কোনো হাহাকার না উঠে। লোডশেডিং পরিস্থিতি যেন মানুষকে বিক্ষুব্ধ না করে।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘খেটে খাওয়া মানুষেরা সংস্কার বা নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত নয়, তারা বেশি চিন্তিত কোনো রকম খেয়ে পরে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা নিয়ে।’ দ্রব‍্যমূল‍্য ও নিরাপত্তা নিয়ে জনগণ চূড়ান্তভাবে বিরক্ত হওয়ার আগেই নিজেদের দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দেওয়ার জন‍্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান। 

সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ‍্যে উপস্থিত ছিলেন- এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) দিদারুল আলম, লে. কর্ণেল অব. হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবিএম খালিদ হাসান, ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ খান, নারী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তার, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব সেলিম খান, দক্ষিণের যুগ্ম সদস্যসচিব আহমেদ বারকাজ নাসির, উত্তরের যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুর রব জামিল, নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক শাহজাহান ব্যাপারী, সহকারী প্রচার সম্পাদক রিপন মাহমুদ, সহকারী দপ্তর সম্পাদক অ্যাড. শরণ চৌধুরী, সহকারী অর্থ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, যুবপার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, আন্তর্জাতিক বিভাগের সদস্য জাহরা মহজাবিনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।