ডিবি পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি /
যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১২
রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে ডিবি পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ১২ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির ধানমন্ডি থানা পুলিশ। তাদের মধ্যে একজনের নাম বেলাল চাকলাদার (৪৫)। তিনি মতিঝিল ৯নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সক্রিয় নেতা।
গতকাল রবিবার রাতে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
পুলিশ জানিয়েছে, বেলাল চাকলাদারের নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি ও উত্তরা পশ্চিম থানায় আরেকটি হত্যা মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা অন্যরা হলেন- মো. মঞ্জু (৪০), সাইফুল ইসলাম (৪০), মো. রাসেল (২৮), মো. জাহিদ (২৪), মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদ (৪০), মো. ইসমাইল হোসেন (৩৩), মো. হিরা শেখ (৩৫), মো. রফিক (৩৫), মো. বাধন (৩০), চাঁন মিয়া (৫৪) ও মো. আসলাম খাঁন (৪৫)।
ধানমন্ডি থানা সূত্রে জানা যায়, জনৈক মো. আব্দুল কাদের পেশায় একজন ট্রাক ব্যবসায়ী। তার মালিকানাধীন চারটি ট্রাক রয়েছে। গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় তার ট্রাক ড্রাইভার মো. নয়ন ও হেলপার মো. জামিরুল ইসলাম পাম অয়েলবোঝাই ৬০টি ড্রাম ট্রাকে নিয়ে চট্টগ্রাম হতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উদ্দেশে রওনা করে। পথিমধ্যে গত ৩ জানুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে ধানমন্ডি মডেল থানাধীন মিরপুর রোডস্থ হোটেল আড্ডার সামনে ৭-৮ জনের একটি ডাকাত দল দুটি মাইক্রোবাস যোগে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গতিরোধ করে সিগন্যাল দিয়ে ট্রাকটি আটকায়।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
অতঃপর মাইক্রোবাস হতে দুজন ব্যক্তি লেজার লাইট ও ওয়াকিটকিসহ সাদা পোশাকে নেমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকের কাগজপত্র দেখতে চায়। তারা জোরপূর্বক পিস্তল ঠেকিয়ে ড্রাইভার হেলপারসহ তেলবাহী ট্রাকটি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। পরে ড্রাইভার ও হেলপারকে জোরপূর্বক চেতনানাশক ওষুধ সেবন করিয়ে হাত ও চোখ বেঁধে কেরানীগঞ্জের রসুলপুর এলাকায় ফেলে দেয়।
এ ঘটনার ট্রাক ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বাদী হয়ে গত ৭ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি ডাকাতির মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, ওই ঘটনার ১৯ দিন পর গত ২২ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টার দিকে একই কায়দায় ডাকাত দল মোহাম্মদপুর থানাধীন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ গেটের সামনে থেকে ৭৫ ড্রাম সয়াবিন তেলবোঝাই একটি ট্রাক ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এ সংক্রান্তে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়।
মামলা তদন্তকালে ধানমন্ডি মডেল থানার একাধিক চৌকস দল গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর মগবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. মঞ্জু, সাইফুল ইসলাম, মো. রাসেল ও জাহিদকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৯ ফেব্রুয়ারি ডাকাতির মূলহোতা মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ আরশি নগর হতে মো. ইসমাইল হোসেন ও মো. হিরা শেখকে, মো. রফিককে ঢাকার কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর হতে, মো. বাধনকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ পানগাঁও হতে, চাঁন মিয়াকে মহাখালী এলাকা হতে, বেল্লাল চাকলাদারকে ঢাকার শনির আখড়া হতে এবং মো. আসলাম খাঁনকে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তারকৃত মো. আসলাম খাঁনের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে তার মুন্সীগঞ্জের বিসিক এলাকার গোডাউন হতে ১০টি তেল ভর্তি ড্রাম যার ওজন ১ হাজার ৮৫০ কেজি ও বাজার মূল্য আনুমানিক দুই লাখ ৯৬ হাজার টাকা এবং ৩৬টি খালি তেলের ড্রাম উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের হেফাজত হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা নোহা গাড়ি, একাধিক বাটন ফোন ও একটি লুণ্ঠিত ট্রাক উদ্ধার করা হয়।
থানা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে।
রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডাকাতদলের মূলহোতা মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদের বিরুদ্ধে ১০টি, মো. জাহিদের বিরুদ্ধে আটটি, মো. হিরা শেখ ও রফিকের বিরুদ্ধে ছয়টি করে, মো. মঞ্জুরের বিরুদ্ধে পাঁচটি, মো. চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে চারটি ও মো. বেল্লাল চাকলাদারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে।
মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে আসছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। তাদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়।
ডাকাতির পূর্বে আসামিরা নিদিষ্ট জায়গায় একত্রিত হয় জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা ডাকাতির সময় সাধারণত বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। পরবর্তী সময়ে ডাকাতি শেষে মোবাইল ফোন সীমসহ ফেলে দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যায়।’
ডাকাতির সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারসহ আরও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।