বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি আরও বাড়ছে
বিদ্যুৎ খাতে চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি আরও বাড়ছে। আগের সরকারের সময়ে বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি থেকে এখন ৬২ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আপাতত বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না। তবে মূল্যস্ফীতি কমে এলে নতুন করে বিদ্যুৎ ও সারের মূল্য সমন্বয় করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্রমতে, গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অর্থ বিভাগ থেকে সামগ্রিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ, গৃহীত পদক্ষেপ এবং অধিকতর করণীয় শীর্ষক একটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। বৈঠকে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। উপস্থাপনায় সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন (২০১০) রহিত করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে ভর্তুকি বাড়িয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সরকার মনে করছে ৬২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বাড়ানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ঋণ কমে আসবে। এ ছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমিয়ে এনে ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে চলতি অর্থবছরে ১১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। এতে ১০ শতাংশ ব্যয় হ্রাস হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
উৎপাদন ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য পুনর্বিবেচনায় এনার্জি অডিট বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ২০২৮ সালের মধ্যে সেটা বৃদ্ধি করে ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাস উত্তোলনের স্বার্থে নতুন রিগ কেনাসহ বাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গ্যাসের রিগ একটি যন্ত্র, যার মাধ্যমে মাটির গভীরে কূপ খনন করা হয়।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এ ছাড়া অধিকতর করণীয় নিয়েও বেশকিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- উচ্চমূল্যস্ফীতি বিরাজমান থাকায় আপাতত বিদ্যুৎ ও সারের মূল্য সমন্বয় না করা। তবে ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হলে ভর্তুকি হ্রাসের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করা হবে। গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধান-উত্তোলনে প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) সম্পাদনে পুনরায় বিডিং রাউন্ড পরিচালনা। জ¦ালানি তেলের সংরক্ষণ ও পরিশোধনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। জ¦ালানি সাশ্রয়ী আধুনিক গাড়ি ও যন্ত্র ব্যবহারে উৎসাহিত করা।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে কয়েক দফা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলেও কার্যত পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সব প্রক্রিয়া। প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশের সমুদ্রে তেল-গ্যাস উত্তোলনে নানা আলোচনা ও কর্মপ্রক্রিয়া গ্রহণ করা হলেও কোনো সুফল মিলছে না। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির গতিধারা, খাদ্যনিরাপত্তা, রাজস্ব আহরণ, আর্থিক খাতের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, বৈদেশিক খাত ও বিনিয়োগ, শিল্প খাতে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়েও আলোচনা হয়।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?