ডিসেম্বরের মধ্যেই তিস্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে: রিজওয়ানা হাসান
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তিস্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ রবিবার বিকেলে কাউনিয়ার তিস্তা সেতু পাড়ে গণশুনানীতে উপস্থিত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আজ তিস্তা পাড়ের মানুষ তাদের দুঃখ দূর্দশার কথা জানান। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া।
সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করা হবে। ইতোপূর্বে চীনের সঙ্গে যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা চুক্তি হয়েছিল তা টেকসই হতো না তাই পরিকল্পনায় কী থাকবে কী থাকবে না এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আপনাদের মতামত নিয়ে আবারও পাওয়ার চায়না এ প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। এ অঞ্চলের ৪৫ কিলোমিটার নদী ভাঙন এলাকা তার মধ্যে ২২ কিলোমিটার বেশি নদী ভাঙন প্রবণ এলাকা। তাই মার্চ মাসের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে নদী ভাঙন রোধে কাজ শুরু করার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিস্তা কোনো দেশের একক নদী না। কেউ যদি মনে করে তিস্তা কারও একক নদী তা হবে তাদের ভুুল ধারনা। কেউ যদি আমাদের বন্ধু হয় তা হলে বর্ষাকালে পানি ছাড়ার আগে কেন আমাদের জানান না। ’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আপনাদের অনেক প্রত্যাশা। কিন্ত আমাদের কাছে তেমন অর্থ নেই, তবু তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া বলেন, ‘বিগত সরকার প্রধান বলে গেছেন, ‘‘আমরা যা ভারতকে দিয়েছি, ভারত তা চিরকাল মনে রাখবে।” কিন্ত ভারত মনে রাখার মতো এদেশকে কিছুই দেইনি। আমরা ভারতকে চাপ দিয়ে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করব। তিস্তা যেনো এ এলাকার মানুষের জন্য আর্শীবাদ হয়। তিস্তার চরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হবে, ফসলের ন্যায্য মূল্য যাতে কৃষকেরা পায় সে জন্য কোল্ড এ এলাকায় কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, তিস্তা নদীতে আরও একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। উত্তরাঞ্চলে কৃষি শিল্পের বিপ্লব ঘটানো হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে ভারত পানি আটকিয়ে তিস্তা মরুভূমিতে রুপান্তর করে। নদী হওয়ার কথা আর্শীবাদ সে তিস্তা নদী হয়েছে আমাদের অভিশাপ। আমরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করছি। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবি জানাব। ’
রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ফয়সালের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একে এম তারিকুল আলম, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি, এমদাদুল হক ভরসা, একে এম মমিনুল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিদুল হক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. আতিক মোজাহিদ,আবু সাঈদ লিয়নসহ আরও অনেকে।
গণশুনানীতে এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘আমরা ত্রাণ চাই না,মিথ্যা আশ্বাস শুনতে চাই না,আমরা দ়ল বুঝি না,নেতা বুঝিনা,আমরা পরিকল্পিত তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন চাই। দল যার যার তিস্তা সবার, তিস্তা ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদী। ’
তারা জানান, রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার ১২টি উপজেলার ৪৪ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এ নদীর সঙ্গে ২২টি নদী যুক্ত। সেই নদী সাধারণ মানুষের মরণফাঁদে পরিনতি হয়েছে। এ নদী শাসনের মাধ্যমে ১১৫ কিলোমিটার নদীর গতি প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ, ভাঙন প্রতিরোধ,বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ হ্রাস, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী খনন, নদী প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ও নদী পুনরুদ্ধার, চ্যানেল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, খননকরা মাটি ভরাট স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল, পাওয়ার প্লান্ট ও স্যাটেলাইট টাউন, সেচ কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, শুস্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করণ প্রকল্প এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দাবি জানান।