সাইপ্রাসের নামে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধে বাধ্য করা হচ্ছে জাফরকে

যশোর প্রতিনিধি
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০১
শেয়ার :
সাইপ্রাসের নামে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধে বাধ্য করা হচ্ছে জাফরকে

বিদেশ গিয়ে আয় উপার্জন করে পরিবারের অভাব দূর করতে চেয়েছিলেন যশোরের জাফর সরদার। কিন্তু তাকে সাইপ্রাসের নাম করে রাশিয়ায় নিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছেলের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর হতাশার মধ্যে পড়েছেন মা-বাবা। 

যশোর সদর উপজেলার বড় মেঘলা গ্রামের ভূমিহীন শ্রবণ প্রতিবন্ধী খায়রুল সরদার দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। পরিবারের অভাব দূর করতে বড় ছেলে জাফর সরদারকে বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা। সাইপ্রাস যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকার বনানী ৪ নং সেক্টরে অবস্থিত ড্রিম হোম ট্রাভেলসে টাকা জমা দিয়েছিলেন জাফর। মাস চারেক আগে তাকে সাইপ্রাসের বদলে রাশিয়ার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে আদম ব্যবসায়ীরা। রাশিয়া তাকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য করছে বলে জাফরের পরিবারের অভিযোগ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গ্রামের একটি চায়ের দোকানে (যেটি খায়রুল সরদারের একমাত্র উপার্জনের উৎস) কথা হয় জাফরের মা হাসিনা বেগমের সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সাইপ্রাস যাওয়ার জন্য এনজিও এবং বিভিন্নজনের কাছ থেকে সুদ করে তারা ৮ লাখ টাকা দেন আদম ব্যাপারীদের (ড্রিম হোম ট্রাভেলস)। মাস চারেক আগে আদম ব্যাপারীরা তার ছেলেকে সাইপ্রাস না নিয়ে প্রথমে নিয়ে যায় সৌদি আরবে। সেখানে ২২ দিন রেখে ওমরাহ হজ করায়। সেখান থেকে নিয়ে যায় দুবাই। সেখানে ক’দিন রেখে লিবিয়ায় নিয়ে যায়। এরই মধ্যে দু’মাস পার হয়ে যায়। মাস দুয়েক আগে লিবিয়া থেকে তারা জাফরকে নিয়ে যায় রাশিয়ায়। তার পর থেকে জাফরের সঙ্গে তারা আর কথা বলতে পারছেন না।’

হাসিনা বেগম আরও বলেন, ‘মাঝেমধ্যে গভীর রাতে ছেলে তাদেরকে মেসেজ (এসএমএস) পাঠাচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা জানতে পারছেন, জাফরকে আদম ব্যাপারীরা রাশিয়ার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন সেখানে তাকে যুদ্ধের ট্রেনিং করতে বাধ্য করছে রাশিয়ার আর্মিরা। ট্রেনিং করতে না চাইলে তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে।’ 

ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছেন বলে জানান। কথা বলতে বলতে ‘আমার টাকার দরকার নেই, ছেলেকে আমার কোলে ফিরে চাই’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসিনা বেগম।

সেখানে অবস্থানরত আসমা নামে হাসিনা বেগমের অপর এক স্বজন বলেন, ‘জাফর সেখানে গিয়ে জানতে পরেছেন, তার আগে আরও অনেক বাংলাদেশিকে সেখানে ট্রেনিং দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। যুদ্ধ করতে না চাইলে অমানবিক নির্যাতন ও গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

ড্রিম হোম ট্রাভেলসের হাসান ও তামান্না নামে দু’ব্যক্তির নাম বললেও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা বা ওই প্রতিষ্ঠানের কারো কোনো নাম্বার তাদের কাছে নেই বলে জানান হাসিনা বেগম ও আসমা। 

চার বছর বয়সী এক ছেলে ও দুই বছর বয়সী এক মেয়ের জনক জাফরকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন তার স্ত্রী খাদিজা খাতুন।