এই পৃথিবীতে আমি মিউজিক করার জন্যই এসেছি
শুভ জন্মদিন বাপ্পা মজুমদার
আজ ৫ ফেব্রুয়ারি জনপ্রিয় সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গায়ক বাপ্পা মজুমদারের জন্মদিন। ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সংগীতযুগল ওস্তাদ বারীন মজুমদার ও ইলা মজুমদারের ঘরে জন্ম নেন তিনি। বাপ্পার জন্ম, বেড়ে ওঠা সংগীতের মধ্যেই। বিশেষ এই দিনটি নিয়ে বাপ্পা মজুমদার বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন জন্মদিন এলে খুব আনন্দ হতো। এখনও আনন্দ হয়, তবে এখন অনুভব করি যে, বয়সটা বাড়ছে। ৫৩ বছরে পা রাখলাম। কিন্তু মনের দিক থেকে তরুণ। জীবনের বড় একটা সময় যে চলেই গেল। আজকের দিনটি পরিবারের সদস্যদের নিয়েই পার করব।’ গতকাল রাত থেকেই ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন এ গায়ক। তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমেই বলতে চাই, আমি ভীষণ ভাগ্যবান একজন মানুষ। এ রকম একটি পরিবারে আমার জন্ম হয়েছে, এই পরিবারে জন্ম না হলে নিশ্চিত বলতে পারি যে আমি আজকের এই পর্যায়ে আসতেই পারতাম না। আমার কাজের প্রতি পরিবারের প্রতিনিয়ত যে সহযোগিতা ছিল, সেটা ভাবাই যায় না। একসূত্রে গাঁথা আমাদের পরিবার। আদর্শ পরিবারের একটা উদাহরণ। মা, বাবা, বড়দা, মেজদা, আমাদের বন্ধনটা ছিল খুবই সুদৃঢ়। আর এই মানুষগুলো এখন অনেক দূরে। কেউ পরপারে, কেউ পরবাসে। বাবার গান নিয়ে কথা বলার দুঃসাহস আমার নেই। তিনি আকাশসম একজন মানুষ। বাবা হিসেবে তিনি যে কতটা অসাধারণ, সেটা আমরা জানি। বাবার কাছ থেকে সংগীতের কিছুই শিখতে পারিনি। আসলে চেষ্টাই করিনি। তখন এড়িয়ে চলতাম। আর এখন কপাল চাপড়াই। আসলে যত দিন বাবা বেঁচে ছিলেন, তত দিন বুঝতেই পারিনি যে আমার মাথার ওপর এত বড় একটা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চলে যাওয়ার পর হায় হায় করছি- কী হারালাম আমরা! এখন প্রতিনিয়ত আক্ষেপ করি, কেন তার কাছ থেকে কিছু শিখলাম না, কিছু জানতে চাইলাম না! কেন তাকে প্রশ্ন করিনি, এই ভাবনাটাই ভীষণ পীড়া দেয় আমাকে। আজকের দিনে বাবা-মাকে ভীষণ মনে পড়ছে। আমার মা শুধু অসাধারণ একজন মা ছিলেন না, ছিলেন দেবীতুল্য একজন মানবীও। তার মতো মানুষ পৃথিবীতে বিরল। তাই সব সময় মনে করি, আমাদের ওপর হয়তো অনেক আশীর্বাদ ছিল, যে কারণে আমরা এ রকম মা-বাবা পেয়েছি। জন্মদিনে বাবা-মা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। শ্রোতাদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি, জানি না, তবে প্রাপ্তি অনেক। মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, এর চেয়ে বড় কোনো প্রাপ্তি হতেই পারে না। আমার হারানোর কিছু নেই, শুধু পেয়েছি। এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার থাকতে পারে না। অনেক, অনেক পেয়েছি।’
জীবন-ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাপ্পা মজুমদার বলেন, ‘এই পৃথিবীতে আমি মিউজিক করার জন্যই এসেছি। গানটাকে ভালোবাসি, গান করতে চাই। আমার খুব একান্ত একটা চাওয়া আছে, সেটা হলো আমি যেন কাজ করতে করতেই দেহত্যাগ করতে পারি। অথর্ব, অসুস্থ হয়ে থাকা, এটা চাই না। কর্মক্ষম থাকতে থাকতেই যেন পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারি। এমন যেন কখনোই না হয় যে আমি কারও জীবনের বোঝা হয়ে গেলাম। এটা আমি কখনই মেনে নিতে পারব না।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
বাপ্পার সংগীতের হাতেখড়ি শুরু হয় বাবা-মার কাছেই। পরবর্তী সময়ে ওস্তাদ বারীন মজুমদারের সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মণিহার সংগীত একাডেমি’তে শাস্ত্রীয় সংগীতের ওপর পাঁচ বছর মেয়াদি একটি কোর্স গ্রহণ করেন। সংগীত ক্যারিয়ার শুরু করেন গিটারিস্ট হিসেবে। এরপর বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে গান করেছেন তিনি। একক সংগীতশিল্পী হিসেবে বাপ্পা মজুমদার আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৯৫ সালে। সে বছর তার প্রথম অ্যালবাম ‘তখন ভোর বেলা’ প্রকাশিত হয়। একক ক্যারিয়ারের পাশাপাশি বাপ্পা মজুমদার ও সঞ্জীব চৌধুরী মিলে ১৯৯৬ সালে গঠন করেন ‘দলছুট’ ব্যান্ড।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
এ পর্যন্ত বাপ্পা মজুমদারের দশটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো হলো- ‘তখন ভোর বেলা’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘রাতের ট্রেন’, ‘ধুলো পড়া চিঠি’, ‘ক’দিন পরে ছুটি’, ‘দিন বাড়ি যায়’, ‘বেঁচে থাক সবুজ’, ‘সূর্যস্নানে চল’, ‘এক মুঠো গান’, ‘জানি না কোন মন্তরে’।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা