রেস্তোরাঁয় ছাত্রদল নেতার হয়রানির শিকার তরুণীর ‘আত্মহত্যা’
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় নিজ ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ইতি দাস (১৯) নামের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাসপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে পরিবারের লোকজন ইতিকে উদ্ধার বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের দাবি, ইতি দাস তার বন্ধুর সঙ্গে হোটেলে খাবার খেতে গিয়ে এক ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে কয়েকজন বখাটেদের হাতে হয়রানির শিকার হন। পরে অপমান সহ্য করতে না পেরে ইতি দাস আত্মহত্যা করে। এ ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছে হয়রানি করা দুই যুবক।
ইতি দাস দাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বরিশাল সরকারি হাতেম আলী কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে আজ সকালে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
অভিযুক্ত ওই ছাত্রদল নেতার নাম হৃদয় রায়হান। তিনি বাউফল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভা শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সাকিবুজ্জামান রাকিবের খুবই কাছের লোক হিসেবে পরিচিত।
সাকিবুজ্জামান রাকিবের দাবি, কিছুদিন আগে হৃদয়কে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
ইতির বন্ধু, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল স্বরস্বতী পুজা উপলক্ষে ঘুরতে বের হয়েছিলেন ইতি। দুপুর ১২টার দিকে তার এক বন্ধুর সঙ্গে উপজেলা সদরের পাবলিক মাঠসংলগ্ন একটি খাবার হোটেলে যান ইতি। তখন হৃদয় রায়হান তাদেরকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করেন। একপর্যায়ে হৃদয় ওই তরুণীর সঙ্গে থাকা বন্ধুটিকে ধরে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং সঙ্গে থাকা কয়েক বখাটে তরুণীর বন্ধুকে বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত করেন। আর তাতে ওই তরুণী বাধা দিলে তার সঙ্গেও ধস্তাধস্তি করে বখাটেরা। পরে ইতির বন্ধুদের একজন ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে জানালে বাউফল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহিন এসে তরুণীর বন্ধুকে মোটরসাইকেলে করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় ইতিও থানায় যান। পরে বিকেল ৪টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাড়িতে পৌঁছে ওই তরুণী ঘরের দোতলায় চলে যায়। এরপর পরিবারের কেউ আর তাকে দেখেনি। রাত নয়টার দিকে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য তার মা ডাকতে গেলে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে চিৎকার করেন। তখন লোকজন এসে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক ইতিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই তরুণীর পরিবারের এক স্বজন বলেন, ‘বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে তার সামনেই বন্ধুকে হেনস্তা ও অপদস্ত হতে দেখে তা সহ্য করতে না পেরে ইতি আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বখাটেরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় চলে বলে তারা বিচার চাইতেও ভয় পাচ্ছেন। তাদের পরিবারের সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছেন।’
হৃদয় রায়হান বলেন,‘তিনি হেনস্তা করেননি। তবে তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাদের পরিবারকে খবর দিয়ে নিয়ে যেতে বলেছি। পরিবার না এসে পুলিশ পাঠালে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং মেয়েটি কান্না করতে করতে বাড়ি চলে যায়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘ওই তরুণী যাওয়ার সময় ওই বখাটেরা থানার সামনেই অবস্থান করছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য কর ওই তরুণী বলছিলেন, ‘‘তোরা আমাকে বাঁচতে দিলি না”।’
প্রত্যক্ষদর্শী দুই ব্যক্তি বলেন,‘তরুণী ও তার বন্ধুটি খাবার হোটেলে বসে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন। আপত্তিকরের বিষয়টি ভিত্তিহীন।’
বাউফল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহিন বলেন,‘এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে হৃদয়। আজ থানায় এক ছেলে এসে বলে তাদের মোটরসাইকেল আটকে রেখেছে। তিনি ঘটনাস্থলে যান। তখন হৃদয় তাকে বলে এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ওখানে যে মেয়ে সংক্রান্ত বিষয় ছিল তা আমি জানতাম না। ’
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে। ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’