কৃষককে মারধরের ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রত্যাহার

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৪৮
শেয়ার :
কৃষককে মারধরের ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রত্যাহার

রাজবাড়ীতে ম্যাজিস্ট্রেটকে বেওয়ারিশ কুকুরে ধাওয়া দেওয়ায় মো. আফজাল খান (৩০) নামের এক কৃষককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আদালত ভবনে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে পেটানো হয়। এ ঘটনায় রাজবাড়ী আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রিট মোহাম্মদ সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাড়াইজুড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী আফজাল। ওই অভিযোগটি গতকাল রবিবার রাতে প্রত্যাহার করেছেন তিনি।

গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজবাড়ী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১-এর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুমন হোসেনের এজলাসে কৃষককে মারধরের এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতিত কৃষক মো. আবজাল খান বলেন, এ ম্যাজিস্ট্রেটের শ্বশুরবাড়ি আমার এলাকায়। গত ৩০ জানুয়ারি পরিবার নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট শ্বশুরবাড়ি এলাকায় গিয়ে হাটাচলা করার সময় একটি বেওয়ারিশ কুকুর তাকে ধাওয়া করে। ওই কুকুরটি আমার বাড়ির এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। এতে করে তিনি রাজবাড়ী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদকে কুকুরের মালিককে ধরে আনতে নির্দেশ দেন। কয়েকদিন ধরেই থানার এসআই আসাদ আমাকে দেখা করতে বলেন। আমি ভয়ে দেখা না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। পরে স্থানীয় মেম্বারকে দিয়ে এসআই আসাদের সঙ্গে কথা বলি।

তিনি বলেন, গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মেঝ ভাই সাহেব আলী খানকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে আসি। পরে আমাদেরকে রাজবাড়ী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১-এর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুমন হোসেনের এজলাসে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর কুকুরটি আমার নয় এবং আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি। তারপরও কোনো কথা না শুনে আমার দুই হাত চেয়ারের সঙ্গে পিঠমোড়া করে বাঁধে। পরে চেয়ারের সঙ্গে হামু দেওয়ায় কাঠের রুল দিয়ে পশ্চাদ্দেশ ও পিঠে আঘাত করে। এতে পশ্চাদ্দেশ ও পিঠে রক্ত জমাট ও ফোলা জখম হয়।

তিনি হুমকি দিয়ে বলেন যে, ওই কুকুরটি যদি এলাকায় দেখা যায় এবং এ বিষয় নিয়ে কাউকে বলি তবে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলের ভাত খাওয়াবেন। পরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করি। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে রাত ৮টার দিকে রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করি। এলাকার লোকজন অনেক করে ধরার কারণে ও গরিব মানুষ হিসেবে গতকাল রবিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগটি প্রত্যাহার করেছি।

আবজালের ভাই সাহেব আলী খান বলেন, অভিযোগের পর থেকেই খুব চাপ সৃষ্টি করছিল। গরীব মানুষ কি করব। ভাইকে বলে এলাকার জামাই হিসেবে রবিবার রাতে থানায় গিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করেছি।

আবজালের ভাতিজা মিলন খান বলেন, আমাদের এলাকার জামাই। একটি ভুল করেছে। এ কারণে জামাই হিসেবে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, রবিবার রাতে আবজাল, তার ভাই সাহেব আলী ও আবজালের স্ত্রী থানায় এসে লিখিতভাবে তাদের করা অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন।

চাপের মুখে অভিযোগ প্রত্যাহার করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তাদের বিষয়, আমার জানা নেই।’

গতকাল রবিবার আদালতে গিয়ে জানা যায় রাজবাড়ী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১-এর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সুমন হোসেন আদালত করেননি। তিনি ছুটিতে আছেন। তবে এ বিষয়ে একাধিক আইনজীবীসহ আদালতে কর্মরতদের কাছে জানতে চাইলে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।