বিএফআইইউকে ফের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বিএফআইইউকে ফের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সক্রিয় হয়ে ওঠা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) আবার নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করছে একটি মহল। ইতোমধ্যে মহলটি সংস্থাটির প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ আমলের সুবিধাভোগী একজনকে নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া অন্য বিভাগে বদলি করা আগের কর্মকর্তাদের বহাল করা হচ্ছে। মূলত শেখ হাসিনার পরিবার এবং ১০টি ব্যবসায়ী গ্রুপের জালিয়াতি তদন্ত আটকাতেই এমন অপতৎপরতা শুরু হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএফআইইউকে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল। যার নজির অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির রিপোর্ট, যেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশ থেকে প্রতিবছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে পাচার হওয়ার তথ্য উঠে আসে। এই পাচারের বিষয়ে দেখভালের প্রাথমিক দায়িত্ব বিএফআইইউর। কিন্তু সংস্থাটিকে ওই সময় নানা উপায়ে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুথানে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে সংস্থাটির

প্রধান মাসুদ বিশ্বাস পদত্যাগ করেন। এরপর সক্রিয় হয়ে ওঠে সংস্থাটি। এর নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি হেড একেএম এহসান। তার নেতৃত্বে শেখ হাসিনার পরিবারসহ শীর্ষ ১০ গ্রুপের আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরি হয়। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা অনুসন্ধান কার্যক্রমও শুরু করেছে। এ ছাড়া অর্থপাচারের অভিযোগে গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৩৬৬ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।

এর মধ্যেই হঠাৎ করে বিএফআইইউকে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করছে একটি মহল। এর অংশ হিসেবে গত ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বিএফআইইউর উপ-প্রধান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম শাহীনুল ইসলামকে সংস্থাটির প্রধান করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে তিনি বিতর্কিত। উপরন্তু সংস্থাটির অপারেশন লেভেলে তার কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। মাত্র আট মাস বিএফআইইউতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবুও তাকে বিভিন্ন গ্রুপের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিভিন্নভাবে তদন্ত দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফআইইউর একাাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন হেড যোগদান করার পর থেকেই কার্যক্রম থেমে গেছে। ইতোমধ্যে একটি মিটিংয়ে তিনি কেবল কোনো সংস্থা তথ্য চাইলে সেটা নিয়ে কাজ করতে বলেছেন। আগ বাড়িয়ে নিজেদের উদ্যোগে কোনো কাজ না করার নির্দেশনাও দিয়েছেন। এ ছাড়া চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট দিতে গড়িমসি করার অভিযোগও করেন তারা।

এদিকে গত মঙ্গলবার বিএফআইইউর ডেপুটি হেডের দায়িত্ব থেকে একেএম এহসানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার স্থানে পদায়ন করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাওসার মতিনকে, যার আগে বিএফআইইউতে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। হঠাৎ কার স্বার্থে তাকে সরানো হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। অভিযোগ আছে, শেখ হাসিনার পরিবারসহ বিভিন্ন গ্রুপের অনিয়মের প্রতিবেদন কার্যক্রম থামানোর জন্য একটি মহল চক্রান্ত করে তাকে সরিয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, এটা অফিসের প্রয়োজনে করা হয়েছে। আর যেসব গ্রুপ নিয়ে কাজ চলমান, তা চলবে। অন্য কোনো কারণে করা হয়নি। এটা রুটিন ওয়ার্ক। আর উনার চাকরির সময়ও বেশি নেই। যাকে দেওয়া হয়েছে তার সময় বেশি রয়েছে। যদিও রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে পরিবর্তন আনা হয়নি। এর মধ্যে রয়েছেন নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও মো. মেজবাউল হক। সাইফুল ইসলামের চাকরি রয়েছে মাত্র দুই মাসের মতো। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন। তার দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এ ছাড়া মেজবাউল হক রিজার্ভ চুরিতে জড়িত থাকার দায়ে বিদেশে যেতে নিষেধজ্ঞা পেয়েছেন, তাকে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব বিভাগ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান প্রধান ও উপ-প্রধানের বিএফআইইউতে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। যেখানে সদ্য বিদায়ী ডেপুটি হেডের ৮ বছরের অভিজ্ঞতা ছিল। ৫ আগস্টের পর বিএফআইইউর যে কাজের গতি ছিল, তা এখন স্থবির হয়ে পড়ছে যা দেশের স্বার্থের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সার্বিক পরিস্থিতিতে বিএফআইইউর কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন গ্রুপের অনিয়মের বিরুদ্ধে যারা কাজ করেছেন, তাদের কয়েকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার মাসুদ বিশ্বাসের সহযোগীদের বহাল করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।