সড়ক রেল নৌ ও বিমান নিয়ে এক মন্ত্রণালয় করার সুপারিশ
সড়ক, রেল, নৌ ও বিমানকে একীভূত করে একটি মন্ত্রণালয় গঠনের সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স। দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কার সুপারিশে রয়েছে এ প্রস্তাব। ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তর দীর্ঘ সময়ে সম্ভব না হওয়ায় শক্তিশালী নগর সরকারের সুপারিশ করা হয়েছে। নির্বাচিত এই নগর প্রতিনিধির অধীনেই থাকবে সরকারের সব সেবা সংস্থা।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে গত ১০ সেপ্টেম্বর গঠিত টাস্কফোর্স। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নে পৃথক সুপারিশে বলা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্পের গড়বড় শুরু হয় সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা থেকেই। সমীক্ষা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। আবার সমীক্ষার নামেই হয় দুর্নীতি। যেমন ঢাকা-চট্টগ্রামে দ্রুতগতির রেলপথ, রাজধানীতে পাতালরেল নির্মাণের সমীক্ষার টাকা জলে গেছে। আবার প্রকল্পকে বাস্তবায়নযোগ্য লাভজনক দেখাতে থাকে অতিরঞ্জিত তথ্য। যেমন পদ্মা রেল
সংযোগ থেকে বছরে এক হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা আয় হবে বলে দেখানো হলেও, চালুর পর ছয় মাসে মাত্র আয় ৩৭ কোটি টাকা আয় হয়েছে। সরকারকে প্রকল্প অনুমোদনে উদ্বুদ্ধ করতে শুরুতে ব্যয় কমিয়ে দেখানোরও চর্চা রয়েছে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার অপচয়, উচ্চ ব্যয়, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের ধারা থেকে বের হওয়ার পথ দেখাতে ১২ সদস্যের অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স গঠন করে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে ‘অবকাঠামো ও সংযোগ : অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি পথ’ শীর্ষক অংশটি তৈরি করেছেন বুয়েট অধ্যাপক ড. শামসুল হক।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এতে বলা হয়েছে, সমন্বিত উন্নয়নের পরিবর্তে সড়ক খাত গুরুত্ব পাওয়ায় রেল ও নৌপথের গুরুত্ব কমেছে। ১৯৭৫ সালে পণ্য পরিবহনের ৩৭ শতাংশ নৌপথে ও ২৮ শতাংশ রেলে হতো। ২০১৯ সালে তা কমে হয়েছে যথাক্রমে ৭ ও ১৬ শতাংশ।
যোগাযোগ খাতকে ভাগ করা ভুল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যোগাযোগ থেকে আলাদা করে রেলকে ২০১২ সালে পৃথক মন্ত্রণালয় করা হয়। বৃহৎ সেতুর জন্য সড়ক থেকে আলাদা করে ১৯৮৫ সালে সেতু বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা পরিবহন খাতে অবনতির অন্যতম কারণ। এর উদাহরণ দিয়ে বলা বলা হয়, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। যেমন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রেলওয়েকে কর্ণফুলী কনটেনাইনার টার্মিনাল নির্মাণে জমি দিচ্ছে না। ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনকে মাল্টিমোডাল হাবে রূপান্তরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর জমি দিচ্ছে না। একই অবস্থা কমলাপুরে, সেখানে সেতু বিভাগের উড়াল এক্সপ্রেসওয়েকে জমি দিচ্ছে না রেলওয়ে।
দেশে জমির সংকট ভয়াবহ ও ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকলেও সরকারি সংস্থাগুলো তা আমলে নিচ্ছে না। সমন্বয়হীনতায় একই এলাকায় একাধিক সংস্থা জমি অধিগ্রহণ করছে। এতে মূল্যবান কৃষি জমি কমছে। যদিও কাগজে-কলমে খাদ্য নিরাপত্তা সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। প্রতিবেদনে উহারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সওজ ও পদ্মা রেল সংযোগের জন্য রেল পৃথকভাবে পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ করেছে। অথচ একই পথে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এতে আরও বলা হয়, ভারত ব্যতীত চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান নিয়ে একটি মন্ত্রলালয়। বাংলাদেশে সমন্বয় না থাকায় ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল পৃথক সংস্থা, পৃথকভাবে করে। এতে বাড়তি টাকা ব্যয় ও জমি নষ্ট হয়।
স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কারের সুপারিশে বলা হয়েছে, পরিকল্পনা কমিশন সমীক্ষার তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত রাখবে। সমীক্ষা অবশ্যই স্বতন্ত্রভাবে যাচাই হতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রকল্প অনুমোদন থেকে কাজ শুরু হতে ৩ বছর পর্যন্ত লাগে। তখন বাজারদর প্রকল্প অনুমোদনের সময়ের চেয়ে বেড়ে ব্যয় বাড়ে। আবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশোধনের পদ্ধতিতে কঠোর হওয়ায় বাড়তি সময় লেগে ব্যয় বাড়ে। তা সহজ করার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ও অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি ব্যয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও উচ্চমূল্যকে চিহ্নিত করেছে টাস্কফোর্স। জমির অধিগ্রহণ কমাতে মাল্টিমোডাল পদ্ধতিতে উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়।