ব্রিটিশ কাউন্সিল ভবন হয়ে গেল বিএনপির কার্যালয়

রাজশাহী ব্যুরো
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ব্রিটিশ কাউন্সিল ভবন হয়ে গেল বিএনপির কার্যালয়

রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে নগরের মালোপাড়ায় ব্রিটিশ কাউন্সিল ভবনে বিএনপির এ কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। স্থানীয় বিএনপির দুই নেতার দাবি, তারা এ সম্পত্তি কিনেছেন। তবে এটি সরকারি সম্পত্তি দাবি করে দুই নেতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। আদালতে সেই মামলা চলমান।

হঠাৎ করেই বুধবার রাতে ওই ভবনে বিএনপির রাজশাহী জেলা ও মহানগর কার্যালয় লেখা সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এরপর বৃহস্পতিবার জাতীয় ও দলীয় পতাকা টাঙিয়ে এবং পায়রা উড়িয়ে, ফিতা কেটে দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈসা। এ সময় সদস্য সচিব মামুনুর-রশিদসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহীতে দীর্ঘদিন এ জমিতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম চলেছে। পুরনো ভবনটি ‘ব্রিটিশ কাউন্সিল ভবন’ নামেই পরিচিত। ওই ভবনে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর হাফিজুল ইসলাম সোহেল নামের একজন ব্যবসায়ী ভাড়া নিয়েছিলেন। চার্চ অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ভাড়ার টাকা নিত। জমিটি শহরের প্রাণকেন্দ্র ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালিয়া মৌজায়। মোট জমির পরিমাণ ছয় কাঠা। এর মধ্যে সাড়ে চার কাঠা জমি চার্চ অব বাংলাদেশের কাছ থেকে কিনেছেন বলে দাবি করছেন মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা ও রাজপাড়া থানা বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। তবে ওই জমি নিয়ে জালিয়াতি হয়েছে দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু।

কাগজপত্রে দেখা গেছে, সিএস ও এসএ খতিয়ানে জমির মালিকের কলামে লেখা আছে ‘মিস্টার হেমিলটন সাহেব, সাং মহিষবাথান’। আরএস খতিয়ানে জমির মালিক হিসেবে লেখা আছে, ‘মিস্টার হেলিটন সাহেব, সাং মহিষবাথান’। ২০২০ সালে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য এ জমির কিছু অংশ সরকার অধিগ্রহণ করে। এ অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ওই বছর ২৫ আগস্ট মিস্টার হেমিলটনের মহিষবাথানের ঠিকানায় চিঠি ইস্যু করা হয়। কিন্তু পরের বছর আরএস রেকর্ডে প্রজার নাম ভুল রয়েছে বলে সংশোধনের জন্য আবেদন করে চার্চ অব বাংলাদেশ। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ তৎকালীন বোয়ালিয়া ভূমি অফিসের সহকরী কমিশনার আবুল হায়াত চার্চ অব বাংলাদেশের পক্ষে সংশোধনের পর নামজারি করে দেন।

২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর চার্চ অব বাংলাদেশের পক্ষে সভাপতি রেভা. সুনীল মানখিন ওই দুই বিএনপি নেতার কাছে সাড়ে চার কাঠা জমি বিক্রি করে দেন। এরপর জমি ওই অবস্থায় ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৭ আগস্ট এ জমির মালিক হিসেবে দুই নেতার পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড টানানো হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ৮ আগস্ট মামলা করেন মিনু। মামলায় জমির ক্রেতা মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা ও রাজপাড়া থানা বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান ছাড়াও বিক্রেতা হিসেবে রেভা. সুনীল মানখিনকে বিবাদী করা হয়। এ ছাড়া মোকাবিলা বিবাদী করা হয় জেলা প্রশাসককে।

মামলার আরজিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু উল্লেখ করেছেন, এ জমির মূল মালিক ছিলেন মিস্টার হেমিলটন সাহেব ওরফে হেলিটন সাহেব। তার ঠিকানা দেওয়া রয়েছে নগরের মহিষবাথান এলাকা। বিগত সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ড মূলে নালিশি সম্পত্তি মিস্টার হেমিলটন সাহেবের নামে রেকর্ড হয়ে চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আরএস রেকর্ডে মন্তব্য কলামে দখল ব্রিটিশ কাউন্সিল লেখা রয়েছে। গত ৭ আগস্ট সর্বপ্রথম মামলার বিবাদী নজরুল হুদা ও মিজানুর রহমান নালিশি সম্পত্তিতে উপস্থিত হয়ে দলিল মূলে স্বত্ব দাবি করেন এবং সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের ঘোষণা দেন। কিন্তু তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন যে, মিস্টার হেমিলটন সাহেব নালিশি সম্পত্তি হস্তান্তর না করলেও চার্চ অব বাংলাদেশের ভুয়া সভাপতি সেজে রেভা. সুনীল মানখিন জাল কাগজপত্র সৃষ্টি করে বেআইনি ও জালিয়াতির মাধ্যমে এ জমি বিক্রি করেছেন।

জমির দুই ক্রেতার একজন মিজানুর রহমান বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে মিজানুর রহমান মিনু ওই মামলা করেন। আমরা আদালতে আমাদের সমস্ত কাগজপত্র দাখিল করেছি। মামলার পর আদালত ওই জমিতে স্থিতাবস্থা জারি করেছিলেন। কাগজপত্র দেওয়ার পর স্থিতাবস্থা তুলে নিয়েছেন। তবে মামলা এখনও শেষ হয়নি। ছয় মাস পর এ মামলার ধার্য তারিখ পড়েছে।’

মিজানুর আরও বলেন, কয়েক দিন আগে জমির আরেক অংশীদার বিএনপি নেতা নজরুল হুদা আমাকে জানান যে এ ভবনটি জেলা ও মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় হিসেবে ভাড়া দিতে চান। তাই রাজি হয়েছি। ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ভবন ভাড়া দেওয়া হয়।