রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি প্রত্যাখ্যান, ২ সমন্বয়ককে অবাঞ্চিত ঘোষণা
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে বিতর্কিতদের রাখার অভিযোগ তুলে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে জুলাই-আগস্টে রাজশাহীতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এসব অভিযোগ তোলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাজশাহী কলেজের ছাত্র জুবায়ের রশীদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রাজশাহীর দুই বীর সন্তান আলী রায়হান ও সাকিব আঞ্জুম নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল জুলাই বিপ্লবের প্রকৃত নায়কদের মাইনাস করে, ৫ আগস্টের পর সুবিধাভোগী কিছু অনুপ্রবেশকারীর মাধ্যমে প্রহসনের পকেট কমিটি গঠন করেছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ৩০ জানুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলা এবং মহানগর নামে ঘোষিত কমিটিতে প্রকৃত আন্দোলনের সাহসী, বিপ্লবী এবং নির্ভরযোগ্য নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে আন্দোলনের চেতনাবিরোধী, বহিরাগত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। আন্দোলনবিরোধী এসব ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজারে চাঁদাবাজি, ক্ষমতার দখল এবং সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ফাতিন মাহাদী ও মাহিন সরকার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির নেতৃত্বে এমন অনেককে রাখা হয়েছে যারা সরাসরি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এমনকি আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদের ছাত্র সংগঠনের মূল নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিকেও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। আন্দোলনের সময় রাজশাহীর বাইরে ছিল, আন্দোলনে সম্পৃক্তই ছিল না, তাদেরকেও কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রকৃত লড়াকু যোদ্ধাদের নাম সেখানে নেই।’
পকেট কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে জুবায়ের বলেন, ‘হত্যা মামলার অন্যতম আসামিকেও এই কমিটির শীর্ষ পদে রাখা হয়েছে। এরা আন্দোলনের চেতনা বিকৃত করে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থসিদ্ধির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ও তার সহযোগী কিছু ভুয়া সমন্বয়কের নেতৃত্বে প্রকাশিত কমিটি ঘোষণার সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে। আমরা রাজশাহীর ছাত্রসমাজ এই অবৈধ পকেট কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি বাতিল করতে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, আব্দুল হান্নান মাসুদ, হাসনাত আব্দুল্লাহ, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ভাইয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর সর্বস্তরের ছাত্রসমাজ এই পকেট কমিটিকে সম্পূর্ণভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং একইসাথে রাজশাহীর মাটিতে মাহিন সরকার ও সালাউদ্দিন আম্মারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। রাজশাহীর ছাত্রজনতা জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষায় যে কোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত বলেও হুঁশিয়ার দেন তিনি।
এসময় রাজশাহী কলেজের আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফিজ সরকার, এনামুল হক আদিব, ইয়াসিন আরাফাত, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শাফিউল ইসলাম অনিক, রাজশাহী মেট্রোপলিটন কলেজের নুর জাহান, রাজশাহী সিটি কলেজের আবু শাকিল আকাশসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহীতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের ব্যাপারে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘এই কমিটি করার ব্যাপারে আমাদের কোনো হাত নেই। এটা কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করে করেছে। আন্দোলনের মাঠে যারা ত্যাগী, তাদেরই রাখা হয়েছে। ’