ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত রাজবাড়ীর আরমান

রাজবাড়ীর কালুখালীর বাসিন্দা আরমান মন্ডল (১৮) রাশিয়াতে স্থলমাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি দেশটির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে মোবাইল ফোনে পরিবারকে এ তথ্য জানান।

আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার মাঝবাড়ী ইউনিয়নের কুষ্টিয়াডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা আরমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার পরিবারে চলছে কান্নার রোল।

আরমানের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে বিদেশ যান আরমান। আরমানসহ ১০ জনকে বিদেশে নেওয়ার জন্য প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করে রিক্রুট এজেন্সি ড্রিম হোম ট্রাভেলস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের ১০ জন তরুণকে প্রথমে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয় রাশিয়ার একটি চক্রের কাছে। রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর তাদের এক মাসব্যাপী কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কৌঁশলে দুজন দেশে ফিরে আসতে সমর্থ হলেও বাকি ৮ জনকে জোরপূর্বক মারধর করে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়।

মুঠোফোনে আরমান জানান, চকলেট ফ্যাক্টরির চাকরি দেওয়ার কথা বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের নিযুক্ত করা হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে। যুদ্ধে স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে আরমান হাসপাতালে এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, আমাদের কর্মী ভিসায় পাঠানো হয়েছে। আমরা কোনো যুদ্ধে অংশ নিতে চাই না। এরপরও আমাদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রাশিয়ান কমান্ডোরা মারধর করে আমাদের যুদ্ধে নিয়ে যান। আমাদের সামরিক পোশাক পরিয়ে হাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তুলে দেওয়া হয়। কিয়েভে ড্রোন হামলা ও স্থলমাইন বিস্ফোরণ হলে আমার সামনে থাকা জিপে ৮ জন প্রাণ হারান। আমি পেছনে মোটরসাইকেলে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। আমি এখন দেশে ফিরতে চাই।’

পাসপোর্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরমানের জন্ম ২০০২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ শেষে তাকে যে সৈনিক নম্বর দেওয়া হয়েছে, তার একটি ছবিও পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত ছবিতে দেখা গেছে, তার আইডি নম্বর- এ ৫-১৯৭০৫৯।

হাতে তজবিহ ও বুকে ছেলের ছবি জড়িয়ে ধরে আহাজারী করতে থাকা আরমানের মা ফাহিমা বেগম বলেন, প্রতিবেশী মৃত ফটিক মন্ডলের জামাতা বালিয়াকান্দি উপজেলার হোগলাড়াঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা আদম ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল খান গত দুই বছর আগে রোমানিয়া পাঠানোর কথা বলে ৬০ হাজার টাকা নেন। দীর্ঘ দিন ধরে তালবাহানা করার পর রাশিয়ার চকলেট ফ্যাক্টরির চাকরির কথা বলে আরমানকে বিদেশ পাঠান। প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে তারা ৩ মাস আগে আরমানকে রাশিয়া পাঠানোর কথা বলে প্রথমে সৌদি আরব পাঠান। সেখানে আদম ব্যবসায়ীরা আরমানকে ওমরা হজ করায়। এরপর তাকে নিয়ে যায় কাতারে। সেখান থেকে দেড় মাস আগে তাকে রাশিয়া নিয়ে যায়। আর রাশিয়া পৌঁছানোর পর তাকে বিভিন্ন কারখানা ও ক্যান্টনমেন্টে মালি বা বাবুর্চির কাজ দেওয়ার কথা বলে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেনা সদস্যরা তাদের প্রায় একমাস প্রশিক্ষণ দেয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জাহিদুল ইসলাম, আরমানের চাচা আতিয়ার রহমান, চাচি রাফেজা বেগম, দাদি রাবেয়া বেগম বলেন, আমার আরমানকে ফেরত চাই, আর অপরাধীদের শাস্তি চাই।

মাঝবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান কাজী শরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তিনি জেনেছেন। সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।