পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭:১৩
শেয়ার :
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের প্রাপ্য সাজা অবিলম্বে কার্যকরের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, হত্যাকাণ্ডের পেছনের পরিকল্পনাকারী, মদদ দাতা ও সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থানরত দোষী ব্যক্তিদের দেশে এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহিদদের পরিবার ও বেঁচে ফেরা সেনা অফিসাররা। এ সময় তার ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণার দাবি জানান। আজ বুধবার সকালে মহাখালী রাওয়া ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বিডিআরে কর্তব্যরত ৫৭ জন মেধাবী সেনা অফিসারকে। তাদের মরদেহ বিকৃত করা হয়, পুড়িয়ে দিতে ট্রাকে তোলা হয়, বেয়নেট দিয়ে পৈশাচিকভাবে মরদেহ ক্ষতবিক্ষত করে গণ মাটিচাপা দেওয়া হয়, ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয় ও গুম করা হয়। এ ছাড়া পৈশাশিকভাবে অফিসারদের পরিবারকে হত্যা ও নির্যাতন করা হয়, অন্যায়ভাবে নিরপরাধ নারী ও শিশুদের টেনে হেঁচড়ে চরম নির্যাতনের মাধ্যমে ধরে এনে কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি করা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বেশির ভাগ অফিসারকেই শারীরিকভাবে চরম নির্যাতন করা হয়। এছাড়া অফিসারদের বাসস্থানে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। অফিসারদের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে পিলখানাকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ধ্বংস স্তূপে পরিণত করা হয়। আর এসব অপরাধ করেছে বিপথগামী বিডিআর সৈনিকরা। উক্ত অপরাধের চাক্ষুষ সাক্ষী শহিদ পরিবার ও বেঁচে ফেরা সেনা অফিসাররা।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘সেদিন পিলখানায় প্রায় ৫ হাজার বিডিআর সদস্য এবং ৪ হাজারের মত অস্ত্র মজুদ ছিল, বিডিআর জওয়ানরা মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্য অস্ত্রাগার লুট করে সকল অস্ত্র বের করে নেয়। যা তারা হত্যাযজ্ঞে ব্যবহার করে। সেদিন যে শুধুমাত্র পিলখানায় বিদ্রোহ হয়েছে তা নয়, বিপথগামী বিডিআর সৈনিকদের উসকানিতে সারাদেশের রাইফেলস ব্যাটালিয়ন ও ট্রেনিং সেন্টারে বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন সরকার গঠিত আনিসুজ্জামান তদন্ত কমিশন, সেনাবাহিনীর গঠিত সেনা তদন্ত, সিআইডি তদন্ত এবং বিডিআর ইউনিট তদন্তে রাজনৈতিক কারণে পেছনের ষড়যন্ত্রকারীরা বেরিয়ে আসেনি। তবে তাদের তদন্তে বিপথগামী বিডিআর জওয়ানদের সরাসরি অংশগ্রহণে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। পর্যাপ্ত প্রমাণ এবং শহিদ ও বেঁচে ফেরা অফিসারদের সাক্ষীর ভিত্তিতে সিভিল কোর্ট ও বিডিআর কোর্টে বিপথগামী জওয়ানদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা প্রদান করা হয়। সিভিল আদালতে হত্যা ও অস্ত্র-গোলাবারুদ এর মামলা পরিচালনা করা হয়। যথাযথ বিধি অনুসরণে এবং অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে বিডিআর অর্ডিন্যান্সের আওতায় বিডিআর কোর্টে বিদ্রোহের মামলায় জওয়ানদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। বিডিআর কোর্টের সাজা নিয়ে প্রশ্ন করা মানে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর অফিসারদের তথা সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। অতএব অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত বিপথগামী জওয়ানদের নিরপরাধ বলার কোন সুযোগ নেই। তাদের মুক্তির দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের প্রাপ্য সাজা অবিলম্বে কার্যকরের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সঠিক বিচার না হলে ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘বিডিআর হত্যাযজ্ঞের পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র জড়িত আছে বলে জাতি বিশ্বাস করে। যা বর্তমান সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনের অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে জাতির প্রত্যাশা। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের পরিকল্পনাকারী, মদদ দাতা ও সহায়তা কারীদের চিহ্নিত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থানরত দোষী ব্যক্তিদের দেশে এনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। পৃথিবীর ইতিহাসে একদিনে ৫৭ জন সেনা অফিসার হত্যার নজির নেই। তাই ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’’ ঘোষণার জন্য শহিদ পরিবারের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ কর্নেল কুদরতি ইলাহির ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান। বক্তব্য দেন, বেঁচে ফেরা ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল (অব.) এস, এম, আব্দুল সালাম, ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল (অব) রিয়াজুল, শহিদ কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসী, শহিদ ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল লুৎফর রহমানের মেয়ে ডা. ফাতেহা বুশরা, শহিদ মেজর আব্দুস সালাম খানের ছেলে সাকিব মাহমুদ খান, শহিদ সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নানসহ আরও অনেকে।