১৬ বছর পর মুক্ত ছেলে, দেখে যেতে পারলেন না বাবা

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২১:০৭
শেয়ার :
১৬ বছর পর মুক্ত ছেলে, দেখে যেতে পারলেন না বাবা

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় দীর্ঘ ১৬ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার মুক্তি পেয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের নেংটিহারা গ্রামের রবিউল ইসলাম। ছেলের মুক্তির জন্য শেষদিন পর্যন্ত লড়াই করা রবিউলের বাবা আব্দুর রহমান গত ৩ মাস আগে মারা যান। ছেলেকে মুক্ত অবস্থায় দেখে না যাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে আব্দুর রহমানের মৃত্যু হয় বলে জানায় রবিউলের পরিবার।

পরিবারের সদস্যরা জানান, স্থানীয় হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে বিডিআর -এ (বর্তমানে বিজিবি) যোগ দেন রবিউল। চাকরিতে যোগ দেওয়ার ২৬ দিনের মাথায় ঢাকায় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় হওয়া হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা মামলার আসামি হন রবিউল। মামলায় তার সাজা হয়।

তবে রবিউলের বাবা আব্দুর রহমানের বিশ্বাস ছিল, যেহেতু ছেলে নির্দোষ তাই একদিন তিনি মুক্তি পাবেই। জমি-জায়গা বিক্রি করে ছেলের মুক্তির জন্য আদালতে চক্কর কেটেছেন দীর্ঘ দিন। এক সময় ছেলের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় ২৫০ জনের জামিন মঞ্জুর করেন কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালত ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১। জামিন পাওয়া ২৫০ জনের মধ্যে একজন রবিউল। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার কারামুক্তি পান রবিউল। কিন্তু যে বাবা দীর্ঘ ১৬ বছর ছেলের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন তিনি আর নেই। গত ৩ মাস আগে মারা গেছেন তিনি।

গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েকদিন পর সারাদেশে পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় বিস্ফোরক ও হত্যা মামলার নিরপরাধ বিডিআর জোয়ানদেন মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেন তাদের স্বজনেরা। রবিউলের বাবাও ছেলের মুক্তির জন্য অসুস্থ শরীর নিয়ে রাস্তায় নামেন।

এদিকে, রবিউলের ভাই শাহাজাহান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রবিউলের কারামুক্তির খবরে খুশি মাসহ পরিবারের সদস্যরা। আত্মীয়স্বজন এবং গ্রামের লোকজনও রবিউলের কারামুক্তির খবরে খুশি।

রবিউলের চাচা রেজাউল করিম জানান, ছেলের জন্য নানা দুশ্চিন্তায় অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলেন রবিউলের বাবা আব্দুর রহমান। ফিরবে ফিরবে বলে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে গত অক্টোবর মাসে মারা গেছেন তিনি। তার মা সালেহা খাতুন এখনও অসুস্থ্য। বোনের বাড়ি ঠাকুরগাঁও শহরে রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আজ যদি রবিউলের বাবা বেঁচে থাকতেন, রবিউলের বাড়ি ফেরার খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।

রবিউলের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিউল আর ফিরবে না, এমনটা ধরে নিয়েছিল পুরো পরিবার। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ফলে রবিউল বাড়িতে ফিরছেন।

রবিউলের দাদী জমেলা বেগম বলেন, ‘ছুয়াডা কোনো অপরাধে নি করে, তাহু ছুয়াডাক ১৬ বছর জেলত থাকিবা হইল। এতদিন বাড়িত থাকিলে বেহা করিলেহে, ওয়ার বাপ-মা নাতি-পুতির মুখ দেখিবা পারিলেহে।’

এ সময় রবিউলের ভাই শাহাজাহান আলী পুনরায় রবিউলকে চাকরিতে যুক্ত করা, বিনা অপরাধে কারাগারে থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে, সরকারের কাছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।