ছেলের হত্যাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে থানায় আবেদন পিতার
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে একমাত্র ছেলের হত্যাকারীদের হাত থেকে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শাহজাহান গাজী নামের এক ব্যক্তি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মো. শাহজাহান গাজী ২০১৯ সালের আলোচিত ১১ বছরের শিশু হত্যাকাণ্ডে নিহত পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিশু সিয়ামের পিতা। তিনি অত্র উপজেলার মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের সুলতানাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।
গত ২১ জানুয়ারি মির্জাগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ২৫শে জানুয়ারি তার ছেলে সিয়ামকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল। পরের দিন ২৬শে জানুয়ারি ধানক্ষেত থেকে সিয়ামের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং ২৭শে জানুয়ারী মির্জাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তিনি। যার নম্বর ১২/১৯। কিন্তু বিগত আওয়ামী সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে আত্মস্বীকৃত খুনিরা সবাই জামিনে মুক্তি পায় এবং বিচারের গতি ধীর করে রাখা হয়।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই খুনিরা তাকে বিভিন্নভাবে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। সেই সঙ্গে খুনির আত্মীয় স্বজনরাও বিভিন্নভাবে তাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করছে। তিনি যাতে সাক্ষী না দেন, সেই জন্য আসামিদের আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় তাকে ও তার পরিবারের লোকদেরকে অপমান করার পাশাপাশি হুমকি দিয়ে আসছে।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, আসামি জামাল ও তার সঙ্গে থাকা গোলখালীর সন্ত্রাসী আত্মীয়-স্বজনরা বলে, ছেলেকে মার্ডার করেছি তাতে কিছু হয়নি, এখন রাস্তাঘাটে মারলে আর কি হবে। জামালের সেই সন্ত্রাসী আত্মীয়দের দেখলে তিনি চিনবেন, তবে তিনি তাদের নাম জানেন না বলে উল্লেখ করেন। এ রকম পরিস্থিতিতে তিনি ও তাঁর পরিবার হুমকির মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
আত্মস্বীকৃত খুনিদের অত্যাচার নির্যাতন থেকে যেন রেহাই পান এবং একমাত্র সন্তানহারা বাবা হিসাবে সমাজে সাধারণভাবে চলাচল করে যেন বাঁচতে পারেন সেই ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন এই ভুক্তভোগী বাবা।
এ ব্যাপারে হত্যা মামলার বাদী শাহজাহান গাজীর (সিয়ামের পিতা) সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে ২৫শে জানুয়ারী আমার ১১ বছরের একমাত্র ছেলে সিয়ামকে ডেকে নিয়ে স্থানীয় সাইফুল ইসলাম জামাল মেম্বারের নেতৃত্বে ছয় জন মিলে জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মামলাটি পটুয়াখালী জজ কোর্টে সাক্ষীর জন্য আছে। আমি ভয়ে সাক্ষী দিতে যেতে পারছি না। আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যেন মামলায় সাক্ষী না দিয়ে আপোষ করি। আমার একমাত্র ছেলেকে জবাই করল, চোখ তুলল, হাত পায়ের রগ কাটল, তাদের সঙ্গে কিসের আপোষ। এখন আবার আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তাই আমি মির্জাগঞ্জ থানায় আবেদন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন হত্যা মামলা করেছিলাম তখন মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশ তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে জামাল মেম্বারকে গ্রেপ্তার করে এবং পরবর্তীতে বাকি খুনিদেরও নাম বের হয়ে আসে। খুনিরা গ্রেপ্তার হলেও আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা জামিনে বের হয়ে আসে। কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে।’
তিনি জানান, খুনিদের ভয়ে তিনি সাক্ষী নিয়ে যাচ্ছেন না। বিভিন্নভাবে তাকে ভয় ভীতি দেখাচ্ছে। তবে প্রশাসন নিশ্চয়তা দিলে তিনি কোর্টে সাক্ষী নিয়ে যাবেন। তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান।
এ বিষয়ে আসামি সাইফুল ইসলাম জামাল মেম্বারের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁ বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামীম হাওলাদার জানান, লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্তের দ্বারা সত্যতা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পটুয়াখালী জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান টোটন জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইন ও বিচার বিভাগ কুক্ষিগত ছিল। তখন ন্যায্য বিচার থেকে সবাই বঞ্চিত ছিল। বিষয়টি যখন অবগত হয়েছি আগামী তারিখে আদালতে উপস্থাপন করব এবং সঠিক পথে মামলাটি যাতে পরিচালিত হয় সে ব্যাপারে আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে।