এর পরও টিউলিপকে কেন মন্ত্রী করলেন স্টারমার?

আমাদের সময় ডেস্ক
২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
এর পরও টিউলিপকে কেন মন্ত্রী করলেন স্টারমার?

বাংলাদেশের মীর আহমেদ বিন কাসেম (৪০) আট বছর বিনাবিচারে আটক ছিলেন। রাতে সশস্ত্র ব্যক্তিরা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়, যখন তার চার বছর বয়সী কন্যাও সেখানে ছিল। যদিও পরিস্থিতি বোঝার বয়স শিশুটির হয়নি। আটক অবস্থায় কাসেমের হাত ও চোখ বাঁধা থাকত। ফলে তিনি জানেন না কোথায় ছিলেন এবং কেন আটক হয়েছিলেন। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম হওয়া মানুষের মধ্যে যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষিত ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম একজন এবং তিনি হাসিনার কড়া সমালোচকও। গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে শেখ হাসিনা ২০ বছরের বেশি সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর তার আমলেই সবচেয়ে বেশি সহিংসতা দেখেছে বাংলাদেশ।

টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি এবং তার খালা শেখ হাসিনা। নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ ওঠার পর গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের দুর্নীতি প্রতিরোধবিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশের অবকাঠামোগত ব্যয় থেকে তার পরিবার ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন (৩৯০ কোটি) পাউন্ড পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে। এ ছাড়া লন্ডনে তিনি তার খালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পত্তি ব্যবহার করেছেন। যদিও স্টারমারের সরকার জানিয়েছে, তিনি মন্ত্রিত্বের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি।

টিউলিপের পদত্যাগ লেবার পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভোটারদের কাছে প্রশ্ন তুলেছে- লেবার পার্টি ও কিয়ার স্টারমার কি টিউলিপের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আগে থেকে আঁচ করতে পারেনি? নানা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি জেনেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের ভোট আকর্ষণে লেবার পার্টির এই দৃষ্টিভঙ্গি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেননা, হাসিনার আমলেই ২০১৬ সালে বিন কাসেমের ঘটনা প্রথম প্রকাশ্যে এসেছিল। অথচ টিউলিপ অতীতে ইরানের নাগরিক নাজানিন জাঘারি-র‌্যাটক্লিফের মুক্তির জন্য প্রচার চালালেও বাংলাদেশের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।

টিউলিপ ২০১৫ সালে এমপি নির্বাচিত হতে সহায়তা করায় আওয়ামী লীগের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। দলটির সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তার ওয়েবসাইটে দুই পৃষ্ঠাজুড়ে বর্ণনাও দেন। যদিও পরে তা মুছে ফেলা হয়। তিনি পার্লামেন্টে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার কোনো প্রভাব খাটানোর ইচ্ছা নেই। তবে লেবার পার্টি তার আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্টতাকে তখন নেতিবাচক হিসেবে দেখেনি। কিয়ার স্টারমার ২০২২ সালে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন, যা যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার কৌশল বলে বিবেচিত হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পূর্ব লন্ডনের মতো এলাকায় বাংলাদেশি ভোট না পেলে সফল হওয়া কঠিন।

লেবার পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, স্টারমার তার বন্ধু ও সহকর্মীদের প্রতি অন্ধভক্ত, যা তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের মতে, টিউলিপের রাজনৈতিক সংযোগ নিয়ে আগে থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করা উচিত ছিল। টিউলিপের পদত্যাগের পর, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের ফলে আরও দুর্নীতি তদন্তের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তিনি এমপি পদে থাকতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সূত্র : বিবিসি