কেন্দ্রীয় বিএনপির তদন্ত কমিটির স্বাক্ষ্য গ্রহণ শুরু
মিরসরাইয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি স্বাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেছে। এক সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভুঁইয়া। ৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে দ্রুত কেন্দ্রে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে তাকে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সামপ্রতিক কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষুদ্ধ হয়ে দ্রুত সমস্যা নিরসনের জন্য এই নির্দেশ দিয়েছেন বলে তদন্ত কমিটির প্রধান ওয়াদুদ ভুঁইয়া জানান।
গতকাল শনিবার দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতা কর্মী এবং বিভিন্ন পেশাজীবীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন করা হয়। প্রথমে মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মীর ও তারপর মিরসরাই থানা পুলিশের বক্তব্য গ্রহণ এবং নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মুন্নার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এ সময় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন, সদস্য আবদুল আউয়াল চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী সহ উপজেলা বিএনপি, মিরসরাই ও বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন তদন্ত কমিটির প্রধান ওয়াদুদ ভুঁইয়া।
এ সময় কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনিরুল ইসলাম ইউসুফ, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আফসার চেয়ারম্যান, আজিজুর রহমান চৌধুরী, মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক মহি উদ্দিন, বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সাবেক আহবায়ক মাঈন উদ্দিন লিটন, সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন কমিশনার, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সরোয়ার উদ্দিন সেলিম, উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সরোয়ার হোসেন রুবেল, সদস্য ফরহাদ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
আজ রবিবার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আরেক যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানসহ তার পক্ষের নেতাকর্মীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করবে তদন্ত কমিটি।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে দু’টি গ্রুপে বিভক্ত। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক নুরুল আমিন ও আরেক যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান দুটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর মিরসরাইতে উত্তরজেলা বিএনপির দুই যুগ্ম আহবায়ক দুই নুরুল আমিন এবং উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী গ্রুপ আধিপত্য বিস্তারে এবং জামায়াতের সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনায় জড়ায়। এতে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
গত ৩১ আগষ্ট মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে এসকিউ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির নির্মাণাধীন একটি কারখানার সামনে ডাকাত আখ্যা দিয়ে সাহেরখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রফিককে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আরও সাতজন আহত হন। ডাকাতির নাটক সাজিয়ে পরিকল্পিতভাবে রফিককে হত্যা করা হয়েছিল বলে দাবি করেন বিএনপি শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী গ্রুপের নেতারা। এছাড়া গত ১৩ জানুয়ারি রাতে মিরসরাই স্টেডিয়ামে চলা বাণিজ্য মেলায় পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইন ও মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ছুরিকাঘাতে জাহেদ হোসেন মুন্না (২২) ঘটনাস্থলে নিহত হন। তিনি মিরসরাই পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় সোমবার রাতেই মামলা দায়ের (নং-৮) করেন জাহেদ হোসেন মুন্নার ভগ্নিপতি আরাফাত হোসেন। মামলা দায়ের করার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসানকে গ্রেফতার করেন। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় গত ১৪ জানুয়ারি কামরুল হাসানকে যুবদলের সদস্য পদসহ মিরসরাই পৌরসভা সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করেছে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। এছাড়াও মিরসরাইয়ে সম্প্রতি ঘটা বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনাকে তদন্তে গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্র কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি।
এ সকল প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান ওয়াদুদ ভুঁইয়া বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলা বিএনপি দু’টি গ্রুপে বিভক্ত। সম্প্রতি এ উপজেলায় বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই জন নেতা খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুনের ঘটনা তদন্তে আমাকে প্রধান করে এক সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। ৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, প্রশাসন, বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে আমি কথা বলব। অনেকে পরিচয় গোপন রেখেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়েছেন। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে শীঘ্রই আমি রিপোর্ট জমা দেবো।’
জানা গেছে, মিরসরাইতে উত্তরজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে মূলত অন্য সকল গ্রুপ এক। দলীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কোন্দলের জেরে প্রান হারিয়েছে অনেকে। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছে।