অভিযোগ প্রমাণিত হলে টিউলিপকে এমপি পদও হারাতে হবে: ফাহমিদা খাতুন
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, টিউলিপ আরেকটি দেশের রাজনৈতিক দলের সদস্য। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক না, এমনকি দ্বৈত নাগরিকও না। তিনি কিভাবে প্রধানমন্ত্রী খালার সঙ্গে রাশিয়া গিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পারিপার্শ্বিক তথ্যের ভিত্তিতে টিউলিপের পদত্যাগ অবধারিত ছিল। আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে এমপির পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে, এমনকি লেবার পার্টির সদস্য পদও হারাতে পারেন।
আজ শনিবার প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অভিবাসন বিশ্লেষক ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিদেশি হাইকমিশন ও ব্যাংকগুলোকে প্রবাসীদের সেবায় আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে। এয়ারপোর্টের প্রবাসী লাউঞ্জে যে বার্গার দেওয়া হচ্ছে, তা তারা খেতে অভ্যস্ত কি না সেটা বুঝতে হবে। প্রবাসীরা সোনার হরিণ। তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করা প্রয়োজন। তাদের সম্মান করতে হবে। আমাদের পাঠানো কর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই অদক্ষ। তাই বেশি করে দক্ষকর্মী বিদেশে পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দিলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য প্রফেসর ড. মো. বেলাল হোসেন, ডিবেটিং সোসাইটির মডারেটর অধ্যাপক ড. মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম ও প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবীব ও বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর তামান্না বেগম। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের চারিদিকে বর্তমানে যে চাকচিক্য দেখা যাচ্ছে তা অভিবাসীদের রেমিট্যান্সের কারণেই সম্ভব হচ্ছে। তাদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিশেষভাবে কাজ করছে। এ সকল রেমিট্যান্স যোদ্ধারাই দেশের রিয়েল হিরো। অভিবাসী শ্রমিকদের প্রবল দেশাত্মবোধ রয়েছে। তারা বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করেছিল। নানা শর্তের বেড়াজালে আইএমএফ চার বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করেছে। অথচ প্রবাসীরা কোনো শর্ত ছাড়াই গত বছরে ২৭ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছে। দেশের কর্মক্ষম ২৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় অভিবাসনের মাধ্যমে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান না করা গেলে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও ১০ শতাংশ বেড়ে যেত।
তিনি বলেন, পরিবার পরিজনকে ফেলে শ্রমে ঘামে উপার্জিত রেমিট্যান্স বাংলাদেশে পাঠাচ্ছেন আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা। অথচ আমরা দেখেছি পতিত আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে মুজিব পরিবারের বিরুদ্ধে ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। যার সঙ্গে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের যোগসূত্রতা রয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ ওঠায় গত কয়েকদিন আগে তিনি মন্ত্রীপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
শুধু শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক নয় মুজিব পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ এখন সকলের মুখে মুখে। একদিকে প্রবাসী ভাই বোনেরা তাদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন, অন্যদিকে মুজিব পরিবারসহ হোয়াইট কলার মানুষেরা বিদেশে অর্থ পাচার করছেন। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় কালো দাগ।
কিরণ আরও বলেন, বর্তমান সরকার কর্তৃক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জ, সাবসিডাইজ মূল্যে খাবার গ্রহণের সুবিধা, রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া, অভিবাসী কর্মীদের এমআরপি পাসপোর্ট প্রদান শুরু করা, অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য হাসপাতাল চালু, অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রিত রাখার উদ্যোগ নেওয়াসহ অভিবাসী কর্মীবান্ধব বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা অভিবাসী কর্মীদের সম্মানিত করেছে। অভিবাসীদের সম্মানিত করলে, তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করলে, সামাজিকভাবে তাদের স্বীকৃতি দিলে দেশের প্রতি তাদের ওনারশীপ আরও বাড়বে। ফলে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে তারা আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবেন।
সেমিনার শেষে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২৪ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও রানারআপ বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের নগদ অর্থ পুরস্কারসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।