রহস্য উন্মোচনে তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেবে পুলিশ
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ছাড়াও উচ্চ আদালত গঠিত একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে। গতকাল পর্যন্ত এই হত্যাকা-ের জট খোলার মতো কোনো তথ্য বের করতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে হাল ছাড়ছে না টাস্কফোর্স ও পিবিআই। এখন পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পিবিআই জনসাধারণের কাছে তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারির উদ্যোগ নিয়েছে।
টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ও পিবিআই প্রধান মোস্তফা কামাল গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকা-ের রহস্য বের করতে আমরা সার্কুলার জারি করতে যাচ্ছি; হত্যাকা- সম্পর্কে কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের জানানোর জন্য। ওই সার্কুলারে ফোন নম্বর দেওয়া থাকবে। যে কেউ পরিচয় প্রকাশ করে বা গোপন রেখে আমাদের তথ্য দিতে পারবেন।
এদিকে আলোচিত এই হত্যাকা-ের রহস্য বের করতে বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান (সাবেক র্যাব কর্মকর্তা) এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে টাস্কফোর্স। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক কারাবন্দি এই দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। ৮ জানুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসেন অনুমতি দেন। জেলগেটে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে।
এই হত্যাকা-ের রহস্য বের করতে গত ৩০ ডিসেম্বর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাস্কফোর্স। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় খুন হন সাগর ও রুনি। ঘটনার সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে ৪ বছরের ছেলে মাহির সারওয়ার মেঘ। হত্যাকা-ের পর ড. মাহফুজুর রহমানের লন্ডনে দেওয়া কিছু বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমনকী তাকে ওই সময় গ্রেপ্তারেরও দাবি ওঠে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে ওই সময় র্যাবের একটি দল কারওয়ান বাজারে এটিএন বাংলার কার্যালয়ে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। একই বিষয়ে গত ৩০ ডিসেম্বর পিবিআই মাহফুজুর রহমানকে ধানমন্ডির পিবিআই কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পাওয়ার পয়েন্টে তার লন্ডনে দেওয়া বক্তব্য শোনানো হয়। তখন তিনি বলেন, লন্ডনে তিনি যা বলেছিলেন, তা বলতে চাননি। তাকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বলতে বাধ্য করা হয়েছিল। এ জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
এদিকে গতকাল সাগর-রুনি হত্যাকা-ের বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর বক্তব্য নিয়েছে হত্যা মামলার তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্স।
এ ব্যাপারে পিবিআই প্রধান মোস্তফা কামাল বলেন, ইকবাল সোবহান চৌধুরী সাংবাদিক নেতা ছিলেন। ঘটনাটির ব্যাপারে তার কাছে এমন কোনো তথ্য থাকতে পারে, যা তদন্তে সহায়ক হবে। এ কারণেই তার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার পর তিনি এ নিয়ে অনেক বক্তব্য দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
গত বছর ২৩ অক্টোবর সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছয় মাসের মধ্যে টাস্কফোর্সকে তদন্ত শেষ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব র্যাব থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সকে দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এই হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। ঘটনার দুই মাস পরও তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন। এরই মধ্যে এক যুগ পার হলেও মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা। সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল।
তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুর রহমান প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৭ জানুয়ারি নতুন দিন ধার্য করেন। এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ১১৪ বার সময় নেওয়া হয়েছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাগর-রুনি। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক এবং রুনি এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন। ওই ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। থানা পুলিশের পর মামলার তদন্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ডিবি ব্যর্থতা স্বীকার করলে উচ্চ আদালত র্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। গত বছর ৪ নভেম্বর মামলা পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়।