সাজানো হত্যামামলা করে অর্থবাণিজ্য
ভুয়া বাদীর শাস্তি চান জীবনের বাবা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় গত ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন পল্লবীর বাওনিয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা রমজান মিয়া জীবন (২৮)। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ অক্টোবর তিনি মারা যান। তার এ মৃত্যুকে পুঁজি করে একটি চক্র সাজানো ঘটনাস্থল ও মিথ্যা আত্মীয়তার পরিচয় দিয়ে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
ওই মামলায় ১১৯ জনকে আসামি করে পরে শুরু করে ‘বাণিজ্য’; কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ ও শহীদ জীবনের পরিবারের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয় মামলা-বাণিজ্য; হয়রানি থেকে রক্ষা পান ভুয়া মামলার আসামিরা। পিবিআই ও পল্লবী থানাপুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে প্রতারক বাদীর মামলা-বাণিজ্যের নেপথ্যের গল্প।
এদিকে ছেলে হত্যার ঘটনায় জীবনের বাবা জামাল মিয়া বাদী হয়ে গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন, যেখানে শেখ হাসিনাসহ ৫২ জনকে আসামি করা হয়।
পিবিআই, পল্লবী থানা ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত রমজান মিয়া জীবন রাজধানীর আলুবাজার এলাকার একটি জুতা কারখানার কর্মচারী। পরিবারের সঙ্গে থাকতেন পল্লবীর বাওনিয়াবাদ এলাকার ভাড়া বাসায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৫ আগস্ট বিকালে গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। অচেনা ব্যক্তির ফোন পেয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় তার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে জীবনকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন দেখতে পান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ অক্টোবর বিকাল ৩টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন জীবন।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এদিকে এই হত্যার ঘটনায় বগুড়ার সারিয়াকান্দির জনৈক মেহেদী হাসান গত ২২ অক্টোবর ঢাকা মহানগর আদালতে একটি নালিশি মামলার আবেদন করেন। এতে তিনি নিজের পরিচয় দেন জীবনের খালাতো ভাই ও রুমমেট হিসেবে। মামলায় মেহেদী হাসান ১১৯ জনকে আসামি করেন। মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়- জীবনের নিহত হওয়ার ঘটনাস্থল পল্লবী থানা এলাকা। মামলার আবেদনে ৫ জনকে সাক্ষীও করা হয়। আদালত তার আবেদন তদন্তে পল্লবী থানাপুলিশকে নির্দেশ দেন।
ইতোমধ্যে আদালতে দাখিল করা মামলার আবেদন দেখিয়ে মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ আসামিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থবাণিজ্য শুরু করেন। এ খবর চলে আসে নিহত রমজান মিয়ার পরিবার ও পল্লবী থানাপুলিশের কাছে। পরে নিহত জীবনের বাবা জামাল মিয়া বাদী হয়ে আদালতে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে একটি নালিশি মামলা করেন। এ ছাড়া ২৯ অক্টোবর তিনি শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ৫২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন পল্টন থানায়।
পরে ২ নভেম্বর মহানগর আদালতে দাখিল করা এক তদন্ত প্রতিবেদনে পল্লবী থানার এসআই আতিকুর রহমান উল্লেখ করেন- আদালতে দাখিল করা নালিশি মামলার বাদী মেহেদী হাসান ভিকটিম রমজান মিয়া জীবনের খালাতো ভাই নন। পারিবারিক কিংবা রক্তের কোনো বন্ধনও নেই তাদের। উভয়েই ভিন্ন ভিন্ন জেলার বাসিন্দা। মেহেদী হাসান নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য ভুয়া ঘটনাস্থল এবং ভুয়া খালাতো ভাই পরিচয় দিয়ে আদালতে মামলাটি করেন। বাদীর আর্জিতে দাখিল করা প্রত্যেকটি ঘটনা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা। মামলার আর্জিতে উল্লেখিত ঘটনার তারিখ ও সময়ে পল্লবী থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনের পাকা রাস্তার সামনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
পল্লবী থানার এসআই আতিকুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আমি তদন্ত করে জানতে পারি মেহেদী হাসান ভুয়া পরিচয় দিয়ে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন। পরে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করি। আদালত মেহেদী হাসানের মামলাটি খারিজ করে দেন।
শহীদ জীবনের বাবা জামাল মিয়া আমাদের সময়কে বলেন, আমি ছেলে হারিয়েছি, অথচ কোথাকার মেহেদী হাসান খালাতো ভাই পরিচয় দিয়ে আদালতে মামলা করে বাণিজ্য শুরু করে। আমি মেহেদী হাসানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
জামাল মিয়া আদালতে প্রতারক মেহেদী হাসান ও তার মামলার সাক্ষীদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন, সেটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই আশরাফুল আলম। গতরাতে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, মেহেদী হাসান তার মামলায় সাক্ষীদের যে নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেছেন তার সঠিকতা পাওয়া যায়নি। শুধু মেহেদী হাসানের নাম-ঠিকানা সঠিক পাওয়া গেছে।