বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত

তারেক আনন্দ
১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত

সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিঞ্জেতে উন্মুক্ত হয়েছে ‘অন্ধকারের গান’। এ সিরিজে অভিনয় করেছেন শাহনাজ সুমি। নতুন এ কনটেন্ট ও তার অভিনয়ের পথচলা নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তারেক আনন্দ

আপনি বেছে বেছে কাজ করেন। ভালো চরিত্রের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। অবসর সময়ে কী করা হয়?

অভিনয়কে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসি। অভিনয় থেকে আসলে কিছু পাওয়ার নেই। খুব জনপ্রিয় হবো, আমার অনেক টাকা-পয়সা হবে, ওরকম আশা করি না। হয়ে গেলে সেটা ভালো। ভাগ্যে থাকলে যে কারও যে কোনো সময় হতে পারে। বেছে বেছে কাজ করি নিজের প্রশান্তির জন্য। আরেকটা বিষয় হলো, বাড়তি সময়ে যে যে জিনিসগুলো ভালোবাসি সেগুলো নিয়েই থাকি। ফ্যামিলির সঙ্গে সময় কাটানো, আমার খুব পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করছি- শিশু বিকাশ এবং সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ ছাড়া ছবি আঁকা, একটু নাচের প্র?্যাক্টিস, অভিনয় নিয়ে ভাবা এবং লেখালেখি। এগুলোই আমার পছন্দের কাজ। ২০২৫ সাল আমার হয়তো একটু অন্যরকম যাবে। এ বছর গ্র?্যাজুয়েশন শেষ করব। জীবনটাকে শক্তভাবে স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নেব হয়তো।

এখন সময় ওটিটির। ওটিটিতে কাজ করে কতটা ভালো লাগা কাজ করছে?

ওটিটি আমার ভীষণ পছন্দের জায়গা। সব মাধ্যমে অভিনয় করতে ভালো লাগে। ওটিটিতে বিশেষ কারণ হচ্ছে, এখানে যে কাজগুলো করি খুব মনোযোগ দিয়ে করা হয়। যত্ন নিয়ে করা, চর্চার মধ্য দিয়ে কাজটা করা হয় এবং কাজের গভীরতা থাকে। বড় পর্দার কাজ যেমন, সিনেমাটা যতদিন হলে থাকে ততদিন মানুষ উপভোগ করে। কিন্তু ওটিটির কাজগুলো থেকে যায়। সবাই যে কোনো সময় উপভোগ করতে পারেন। এই বিষয়টা বেশি ভালো লাগে। আমি যে প্রজেক্টগুলো করেছি, মোবারকনামার সুরাইয়া, বুকের ভেতর আগুনের শবনম, অন্ধকারের গানে শাপলা। সবগুলো চরিত্র খুব কাছ থেকে অনুভব করেছি। অন্যান্য কাজের দর্শক প্রতিক্রিয়া বলার মতো ছিল না। ওটিটির কাজগুলো করে দর্শকদের কাছ থেকে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছি। ওটিটির কাজগুলো আমাকে অনেক বেশি প্রাপ্তি দিয়েছে। সেই জায়গা থেকে ওটিটির প্রতি অনেক বেশি আকর্ষণ থাকে।

৮ জানুয়ারি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্ত হয়েছে আপনার অভিনীত ‘অন্ধকারের গান’। এটির সাড়া কেমন পাচ্ছেন?

সবেমাত্র বিঞ্জেতে রিলিজ হলো। মানুষ হয়তো ‘অন্ধকারের গান’ দেখা শুরু করছে। ভিকি জাহেদ ভাইয়ের কাজ স্পেশালি অন্যরকম। খুব যত্ন নিয়ে নির্মাণ করেছেন। আশা করি এ কাজটিও মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। এর আগে সব কাজে ভালো সাড়া পেয়েছি। কেন ভালোবাসবে ওই চরিত্রকে? এর কোনো বিনিময় নেই। দর্শক নিঃস্বার্থভাবে যে প্রতিক্রিয়াটা দেখায় সেটা সুন্দর, সৎ ও পরিষ্কার। নতুন কাজটা থেকে যতখানিই ভালোবাসা পাব দর্শকের, ততটুকুই সুন্দরভাবে নিজের করে নেব।

শাহনাজ সুমি অভিনয়ে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করেছেন। এর মধ্যে একাধিক চরিত্রে অভিনয় করলেন। কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে বেশি ভালো লাগে?

অবস্থান তৈরি হয়েছে কিনা সেটা বলব না। চেষ্টা করছি সব সময়। প্রথমত, কাউকে দেখানোর জন্য অভিনয় করি না। নিজের ভালো লাগা থেকে অভিনয় করি। অভিনয় করতে আমার ভালো লাগে। যখন আমার টিম ভালো-মন্দ মন্তব্য করে, সেটা ভালো লাগে। আমি যে চরিত্রগুলো করেছি সেগুলোই আমার আসল প্রাপ্তি। সুরাইয়া, শবনম, ইমা, জুঁথি, বিজলী, সাথী এবং শাপলা চরিত্রে অভিনয় করলাম। সবগুলো আমার খুবই আপন চরিত্র। কেন ভালো লেগেছে এটা বলতে গেলে বলতে হয়, একেকটা চরিত্রের একেক দিক আমার ভালো লাগে। যেমন ‘সোনার পাখি রূপার কাঠিতে’ ‘বিজলী’ চরিত্র আমার খুব কাছের। কারণ নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম আবিষ্কার করেছি ‘বিজলী’র মধ্য দিয়ে।

এর আগে আমি যেগুলোতে অভিনয় করেছি তার কিছুটা আলোচনায় এসেছে বা আলোচনায় আসেনি। ‘বিজলী’ আমাকে বিশ্বাস করিয়েছে হয়তো আমি অভিনেত্রী হতে পারব। এজন্য বিজলী আমার অনেক কাছের। আমার যতেœ গড়া চরিত্র হলো মোবারকনামার ‘সুরাইয়া’। এখানে আমি যেভাবে ধরে ধরে অভিনয় করেছি, আগে করতে পারিনি। তখন অভিজ্ঞতা কম ছিল। এখন যে খুব বেশি অভিজ্ঞতা সেটাও বলছি না। সুরাইয়া চরিত্র খুবই যত্ন নিয়ে করেছি। আবার শবনম আমার খুব পছন্দের। আমি সব সময় চাইতাম, বাংলাদেশের একজন নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করব। এখানে আমি নায়িকা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছি।

নামের পাশে চিত্রনায়িকা বিশেষণ খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিল। কেউ জোর করে চিত্রনায়িকা বসিয়ে দিতে পারে না। যখন দর্শক ভাবে নায়িকা, তখনই নামের পাশে চিত্রনায়িকা বসে। সেখানে আমি চিত্রনায়িকার চরিত্র করলাম। এজন্য ‘শবনম’ ক্যারেক্টার কাছের। আমার পছন্দ চরিত্রের কথা যদি বলতে হয়, যার জীবনের কোনো বাঁক নেই, দুঃখ নেই, সুখ নেই, চরিত্রের কোনো উঁচু-নিচু ভাঁজ নেই এমন চরিত্র করতে ভালো লাগে না। আমাদের বাস্তব জীবন তো অনেক বন্ধুর হয়। সেখানে আমি যখন একটা চরিত্র বাস্তবায়ন করতে যাব তখন বাস্তবের সঙ্গে মিল থাকতে হবে।

এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে অভিনয় যখন করেন, তখন কী ধরনের প্রস্তুতি থাকে?

এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে মনোনিবেশ করা আসলে সম্পূর্ণ আমার ওপর নির্ভর করে না। অনিয়ন্ত্রিত মনের ওপর নির্ভরশীল। আমি যে স্ক্রিপ্টগুলো পড়ি, তখন যদি আমার মন বলে এখানে আমি চরিত্রের গভীরে ঢুকতে পারব। এই চরিত্রে কিছুদিন থাকতে পারব, তখনই সে চরিত্র করি। যদি মন না বলে আমি এখানে বসবাস করতে পারব না, ক্যারেক্টার হয়ে থাকতে পারব না, সে ক্ষেত্রে আমি কাজগুলো করি না। এজন্য আমার কাজের সংখ্যা কম। কিন্তু যখন ক্যারেক্টারে ঢুকে যাই, তখন আমি অন্য কিছু ভাবি না। অনেক সময় দেখা যায়, শুটিংয়ে আমার সেলফি তোলা হচ্ছে না। শুটিংয়ে যাওয়ার পর আমি ভুলে যাই আমার কাছে মোবাইল আছে। মনের একটা কর্নারে আমি আসলে ওই চরিত্রটা নিয়ে বসবাস করি। যে কারণে ওই চরিত্র আমার সঙ্গে অনেস্ট থাকে। আমি ওই চরিত্রের সঙ্গে অনেস্ট থাকি। দুজনের মেলবন্ধনে একটা সুন্দর জিনিস স্ক্রিনে দেখা যায়। আমার মনে হয় যে, চরিত্র হয়ে ওঠার পেছনে প্রথম এবং সর্বশেষ যে প্রস্তুতিটা থাকে সেটা হলো সততা।

বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করতে ইচ্ছে করে না?

বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করতে অনেক ইচ্ছে করে। দেশের ছবি, দেশের বাইরের ছবি দেখে দেখেই বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই নাচ-গান, অ্যাকশন ধাঁচের সিনেমা আমাকে ভীষণ টানে। নাচ শেখার সময় সিনেমার গান দেখে যখন নাচতাম, তখন মনে হতো নায়িকা হিসেবেই নাচছি। সেই জায়গা থেকে ওই ইচ্ছাটা আছে। অনেক ভালো ভালো সিনেমা হচ্ছে, কিন্তু সংখ্যায় কম। বছরে একটা-দুইটা বা তিনটা সিনেমা হিট হচ্ছে। তিনটা সিনেমায় তিনজন নায়িকার যে কোটা সেখানে বাংলাদেশি, বিদেশি মিলিয়ে প্রতিযোগিতা বেশি। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয় জড়িত আছে। বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত। এখনও সুযোগ পাইনি, তবে আমার আগ্রহের জায়গার কমতি নেই।

দেশের সিনেমায় দেশি নায়িকারা উপেক্ষিত, এটা নিয়ে কী বলবেন?

বিদেশমুখী হওয়ার ব্যাপারে যারা তাদের নিয়ে কাজ করছেন তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত কোনো ব্যাখ্যা আছে। এটা আসলে বিজনেস সেক্টর। আমার ওভাবে বলার কিছু নেই। যার যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই কাজ করবে। আমার ঝুলিতে যখন কাজ আসবে তখন যতটা ভালো সবাই করছে, তার চেয়ে আমি বেশি ভালো করার চেষ্টা করব। এটা আসলে অপেক্ষা। আমার যখন সময় আসবে তখন যেন বুঝিয়ে দিতে পারি যে, আমি আসলে ভালো সব সময় করতে পারতাম। এখন যেভাবে চলছে, এটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।