আবার অর্থ সংগ্রহের ভূমিকায় বিএবি

জিয়াদুল ইসলাম
১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
আবার অর্থ সংগ্রহের ভূমিকায় বিএবি

এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস’ (বিএবি)-এর চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় বিভিন্ন কর্মসূচির নামে প্রতি বছর ব্যাংকগুলো থেকে চাঁদা তুলে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ তহবিলে জমা করতেন। শেখ হাসিনার নামে পরপর দুটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের নামে ব্যাংকগুলোকে বড় অঙ্কের চাঁদা দিতে বাধ্য করেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএবির নেতৃত্বে পরিবর্তন এলেও অর্থ সংগ্রহের সেই পুরনো নীতিতে পরিবর্তন আসেনি। আবারও অর্থ সংগ্রহের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের এই সংগঠন।

জানা গেছে, এবার একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনে সহায়তা করার জন্য ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা অনুযায়ী অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই অর্থ জমা দিতে বিএবির পক্ষ থেকে সম্প্রতি ৪১ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে আগের মতো অর্থ সংগ্রহের এমন উদ্যোগ নিয়ে কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় ওই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্পন্সর করার জন্য গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিএবির নতুন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকারের কাছে একটি আবেদন পাঠানো হয়। এরপর ওই আয়োজনে সহায়তা করার জন্য ব্যাংকগুলো থেকে ৪ কোটি টাকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় বিএবি। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে ডোনেশনের পরিমাণও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে যেসব ব্যাংকের পারফরম্যান্স ভালো, তাদের কাছে ২০ লাখ টাকা করে চাওয়া হয়েছে। যাদের গড় পারফরম্যান্স রয়েছে, তাদের কাছে ১০ লাখ টাকা এবং যারা পারফরম্যান্সে পিছিয়ে তাদের কাছে ৫ লাখ টাকা করে চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বিএবির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকারের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হয়; কিন্তু সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে বিএবির ভাইস চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের দেশে একটা ম্যারাথন হচ্ছে। এ ধরনের আয়োজনে আমাদের অংশগ্রহণ করা উচিত। আমরা সার্বিকভাবে যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে দিচ্ছি, সেটি খুব বেশি নয়। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই অর্থ দিতে কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না। আমরা বিএবির পক্ষ থেকে শুধু অনুরোধ করেছি।

তবে ডোনেশন সংগ্রহে আগের মতো বাধ্য করার এমন উদ্যোগের সমালোচনা শুরু হয়েছে ব্যাংকপাড়ায়। বিএবির এ ধরনের কর্মকা- নিয়ে কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ক্ষোভ প্রকাশ করে আমাদের সময়কে বলেন, আগে যেসব কর্মকা-ের জন্য বিএবি সমালোচিত ছিল, সেই কাজ আবার শুরু হয়েছে। এভাবে সহায়তার নামে অর্থ প্রদানে বাধ্য করার কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

সাধারণত করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) তহবিল থেকে এসব অর্থের জোগান দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। যদিও সিএসআর কার্যক্রমে কোন খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা যাবে, সেটি নীতিমালা জারি করে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা আছে- ব্যাংকগুলোর মোট সিএসআরের ৩০ শতাংশ শিক্ষায়, ৩০ শতাংশ স্বাস্থ্যে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন খাতে ২০ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে (আয়-উৎসারী কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং অন্যান্য) ২০ শতাংশ অর্থ ব্যয়ের নির্দেশনা রয়েছে।

তবে গত দেড় দশকে সিএসআর ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য অংশই ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল’ ঘিরে হয়েছিল। কারণ এ সময়ে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নজরুল ইসলাম মজুমদার বিএবির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সহায়তার নাম ভাঙিয়ে ব্যাংকগুলোতে লাগামহীন চাঁদাবাজি করার অভিযোগ রয়েছে। যে কোনো উপলক্ষ কিংবা দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাংক চেয়ারম্যান ও এমডিদের গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ সহায়তা দিতে বাধ্য করতেন। এভাবে প্রতি বছর ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে কয়েকশ কোটি টাকা জমা করা হতো। এ ছাড়া শেখ হাসিনার নামে দুটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের নামে ব্যাংকগুলো থেকে অন্তত ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। তার এমন কর্মকা-ে ব্যাংক চেয়ারম্যানদের অনেকে বিরক্ত হলেও ভয়ে মুখ বন্ধ রাখতেন। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদ থেকে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে সরিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বিএবির চেয়ারম্যান পদও হারান তিনি।