বিরোধ বাড়ছে ইন্ডিয়া জোটে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২০:১৭
শেয়ার :
বিরোধ বাড়ছে ইন্ডিয়া জোটে

ভারতের প্রধান বিরোধী জোট ইন্ডিয়ায় অনেকদিন ধরেই ফাটলের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। নেতৃত্ব কংগ্রেসের কাছে থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে চলে যেতে পারে এমনটাও শোনা যাচ্ছিল। এবার জোট নিয়ে নতুন মন্তব্য করে আলোচনা উসকে দিলেন ওমর আবদুল্লাহ।  

 ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মূলত কংগ্রেসের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল ইন্ডিয়া জোট । সেই জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্বে চলা ইউপিএ-র দলগুলি ছাড়াও সামিল হয়েছিল সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স, বাম দলগুলি। অন্ধ্রের ওয়াইএসআর কংগ্রেস, ওড়িশার বিজেডি ও তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে ছাড়া প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দলই ইন্ডিয়া-তে ছিল।

এখন সেই জোটেই বিরোধ তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি দিল্লি নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ) ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট না হওয়ায় এবং সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল আপ-কে সমর্থন করায় গোলমাল আরও বেড়েছে। আপ এবং কংগ্রেসও একে অপরের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করছে।

এই পরিস্থিতি বিতর্ককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ওমর আবদুল্লাহ শ্রীনগরে বলেছেন, ‘দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো যোগ নেই। আপ ও কংগ্রেস সেখানে ঠিক করুক, কীভাবে তারা সবচেয়ে ভালোভাবে বিজেপি-র মোকাবিলা করতে পারে।’

প্রশ্ন করা হয়, ইন্ডিয়া ব্লককে কি লোকসভা নির্বাচনের জন্য গঠন করা হয়েছিল? জবাবে ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমার মনে হয়, এরকম কোনো সময়সীমা রাখা হয়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ইন্ডিয়া ব্লকের কোনো বৈঠক হচ্ছে না। তাই এর নেতৃত্ব কে দেবে, কর্মসূচি কী হবে, তা টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই। যদি লোকসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে এই ব্লক বানানো হয়ে তাকে, তাহলে তাহলে ওরা এটাকে গুটিয়ে ফেলুক।’

লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হয়েছিল। আপ লড়েছিল চারটি আসনে, তিনটিতে কংগ্রেস। কিন্তু জোট সত্ত্বেও সবকটি আসনে তারা বিজেপি-র কাছে হেরে যায়। বিজেপি আবার সাতটির মধ্যে সাতটি আসনে জয় পায়। তারপর এবার বিধানসভায় আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হয়নি। 

তারপর কেজরিওয়ালের তীব্র সমালোচনা করেন দিল্লির কংগ্রেস প্রধান অজয় মাকেন । কেজরিওয়ালকে 'ফর্জিওয়াল' অভিহিত করে তিনি বলেন, কেজরিওয়াল জাতীয়তাবিরোধী, কারণ, তিনি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, ৩৭০ ধারা বিলোপ, নাগরিকত্ব আইন সমর্থন করেছিলেন। তার অভিযোগ ছিল, করোনার সময় জনগণের টাকা খরচ করে কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন সাজিয়েছেন।

এরপর আপ জানায়, তারা ইন্ডিয়া জোট থেকে কংগ্রেসকে বহিষ্কার করার জন্য অন্য শরিকদের বলবেন। এরপর সমাজবাদী ও তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তারা আপকে সমর্থন করছে।

কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তো কংগ্রেসের জন্য কিছু করেনি। তিনি লোকসভা নির্বাচনের আগে ইন্ডিয়া ব্লকের সদস্য হয়েছেন। কিন্তু কোথাও তিনি ইন্ডিয়া ব্লককে ভোট দেয়ার কথা বলেননি।’

অধীর বলেছেন, ‘তিনি ইন্ডিয়া ব্লককে ব্যবহার করেছিলেন ভোট সংগ্রহের জন্য। এটা তার একটা কৌশল ছিল। বিজেপি-বিরোধী যে বাতাবরণ, তৈরি হয়েছিল তার সুবিধা নিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি যখন কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা করে, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কংগ্রেসকে দুর্বল করার কাজে নেমে পড়েন।’

অধীর জানিয়েছেন, ‘আমি কেজরিওয়ালকে একটা পরামর্শ দিতে চাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সমর্থন নিলে হিতে বিপরীত হবে। দিল্লির বাঙালি জানে, ‘পশ্চিমবঙ্গে স্বৈরাচারী শাসন চলছে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা নিয়ে দিল্লির বাঙালিরা আমাদের কাছে তাদের মতামত জানায়। তাই মমতার সমর্থন নিয়ে দিল্লিতে বাঙালির ভোট পাওয়ার চেষ্টা করলে কেজরিওয়ালের ক্ষতি হবে।’