এস আলমের ২ ছেলেসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের শুধুমাত্র জুবিলী রোড শাখা থেকে এক হাজার ১১৩ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। যার নেতৃত্ব দেন বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলম।
আজ বৃহস্পতিবার দুই ভাইসহ লুটপাটের এই কাজে সহযোগিতাকারী ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও পরিচালকসহ ৫৪ জনের নামে মামলা করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। সংস্থাটির প্রধান কার্যলয়ের উপ-পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন।
দুদক চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত আমাদের সময়কে বলেন, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এক হাজার ১১৩ কোটি লোপাটের ঘটনায় ৫৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এস আলমের দুই ছেলে ছাড়াও অর্থ লোপাটে সহযোগিতাকারী প্রায় ২৮ জন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও কর্মকর্তারা মামলার আসামি হয়েছেন। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সে মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, বাণিজ্য বিতান কর্পোরেশনের মালিক মো. তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাপার্চার ট্রেডিং হাউজের মালিক এস. এম নেছার উল্লাহ, ড্রিমস্কেপ বিজনেস সেন্টারের মালিক মোহাম্মদ মহসিন মিয়াজী ও এক্সিসটেন্স ট্রেড এজেন্সির মালিক মো. সালাহ উদ্দিন (সাকিব)।
এ ছাড়া ইসলামি ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক প্রায় ৩০ কর্মকর্তাকেও আসামি করেছেন দুদক। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসার্চ অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ সাব্বির, মিফতাহ উদ্দিন, সাবেক ডিএমডি আবুল ফাইয়াজ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, জুবিলী রোড শাখা প্রধান ও এসভিপি সোহেল আমান ও ওই শাখার সাবেক প্রধান একজো শাহাদাৎ হোসেন।
মামলার এজহারে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চট্টগ্রামের জুবিলী রোড শাখায় মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীকে সাপ্লাইয়ার হিসেবে দেখানো হয়। মূলত ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যাংকের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে অপকর্ম ঘটিয়েছেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা ব্যাংকিং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের অনুকূলে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বরে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা গ্রহণ করলেও তার বিপরীতে কোনো মালামাল ক্রয় এবং বিক্রয় না করে বিভিন্ন জাল কাগজপত্র তৈরি করে। এরপর ওই টাকা উত্তোলন ও বিতরণ করে রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ওই চক্রটি নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আবারও বিনিয়োগ সীমা ৮৯০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০০০ কোটি করা হয়। আর ২৮টি ডিল সাজিয়ে চক্রটি ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৯৯৫ উত্তোলন করে। এসব কাজে ব্যাংকিং নীতিমালা এবং ইসলামী ব্যাংকের জন্য প্রচলিত শরীয়াহ নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালে নতুন করে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে ৪টি ডিল সৃষ্টি করে আরও ১৮১ কোটি টাকা উত্তোলন করে নতুন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এভাবে জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের নামে ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে ইস্যু করা অসমন্বিত ৩২টি ডিলে মোট ১ হাজার ৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা ছাড় করা হয়, যা ব্যাংকের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বলে অডিট প্রতিবেদন কিংবা দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে প্রমাণ মিলে। পরে ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে জাল নথি তৈরি করে কৃত্রিম উপায়ে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ৮৭ হাজার পরিশোধ দেখা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঋণ হিসাবে ৯৯৩ কোটি ৭০ লাখ ২৪ হাজার টাকা ও মুনাফা হিসাবে ১২০ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ মোটি ১ হাজার ১১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ মিলেছে। যার মাধ্যমে ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এর আগে, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চট্টগ্রামের চক্তাই শাখা থেকে ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৯ ডিসেম্বরে এস আলমের ছেলে ও ইসলামি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছিল দুদক।